ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের মধ্যে চলমান বিতর্ক এক অভূতপূর্ব সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসাকে। হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত বাজেট পরিকল্পনায় নাসার বিজ্ঞান মিশনের বাজেট অর্ধেকে কেটে ফেলার প্রস্তাব এসেছে, যার ফলে প্রায় ৪০টি চলমান ও উন্নয়নাধীন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এই পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে, বিজ্ঞানীদের শঙ্কা—এটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কর্মসূচির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংকট।
নাসার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি মিশন—যেমন মার্স স্যাম্পল রিটার্ন, নিউ হরাইজনস, মার্স ওডিসি, ম্যাভেন, ভারত-ইউরোপ মিশন ভারিটাস ও ড্যাভিনচি, এমনকি পৃথিবীর জলবায়ু পর্যবেক্ষণের মতো জরুরি প্রকল্পও ছাঁটাইয়ের তালিকায় রয়েছে।
এছাড়াও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)-এর সাথে যৌথ মঙ্গল মিশন এবং চাঁদ ঘিরে পরিকল্পিত লুনার গেটওয়ে মিশনেও বাজেট কাটছাঁট করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
নাসার বেশিরভাগ রকেট উৎক্ষেপণ নির্ভর করে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ ও স্টারশিপ রকেটের ওপর। কিন্তু ট্রাম্পের হুমকি—তিনি স্পেসএক্সের ফেডারেল কনট্রাক্ট বাতিল করবেন। এতে করে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন পর্যন্ত সাপ্লাই চেইনও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে।
ড. সিমিওন বারবার, ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির একজন মহাকাশ বিজ্ঞানী বলেছেন, “এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত ও পলিসি-পাল্টে যাওয়া আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটা ভয়ংকর।”
অন্যদিকে স্পেস বিশ্লেষক ড. অ্যাডাম বেকার বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন নাসাকে এখন শুধু দুটি কাজে কেন্দ্রীভূত করছে—চীনের আগেই চাঁদে যাওয়া এবং মঙ্গল গ্রহে আমেরিকার পতাকা স্থাপন।”
এই বাজেট কাটছাঁট ইউরোপের মহাকাশ কর্মসূচিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)-র রোভার মিশনগুলো স্থগিত হতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনেও ইউরোপের অংশগ্রহণ কমে যেতে পারে।
নাসার যে সব প্রকল্প পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ডেটা সরবরাহ করে—তা ‘ক্যানারি ইন দ্য কোল মাইন’ হিসেবে পরিচিত। এই সমস্ত স্যাটেলাইট বন্ধ হলে জলবায়ুর আগাম বার্তা পাওয়ার সক্ষমতা বিপর্যস্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও বেসরকারি খাতে (মাস্ক, বেজোস) নির্ভর করে খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি এখনো প্রমাণিত নয়। স্টারশিপ রকেটের গত তিনটি উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয়েছে। বেজোসের ব্লু অরিজিন এখনো পরীক্ষার পর্যায়ে।
এই বাজেট এখনো কংগ্রেসে অনুমোদন পায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ট্রাম্পের বাজেটই অস্থায়ীভাবে কার্যকর হয়ে যেতে পারে—যা পরে ফিরিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হবে।
মুমু ২
