ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ-পাকিস্তান-চীনের জোট, এবার পানিতে ডুববে কেবল ভারত!

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ৩০ মে ২০২৫

বাংলাদেশ-পাকিস্তান-চীনের জোট, এবার পানিতে ডুববে কেবল ভারত!

ছ‌বি: সংগৃহীত

দিল্লির আলো ঝলমলে জনপথে যখন কথার গর্জন উঠছে, তখন আকাশে এক স্যাটেলাইট চুপিসারে পাঠাচ্ছে সতলোজ নদীর শুকিয়ে আসা ছবির বার্তা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা যেন বজ্রপাত— "আমি এখনো কিছু করিনি!"— এই কথায় কাঁপছে রাজনীতি ও কূটনীতি দুইই। তিনি ইঙ্গিত দিলেন, সিন্ধু জলচুক্তি শুধু পকেটে রাখা হয়েছে, খেলাটা এখনো শুরু হয়নি। আর সেই ‘খেলা’র নেপথ্যে সক্রিয় হয়ে উঠছে এক জিওপলিটিকাল ফ্রন্ট: বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের অদৃশ্য জোট।

পানি এখন আর শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি হয়ে উঠেছে ভোট, প্রতিরোধ এবং প্রতিশোধের হাতিয়ার। উরি হামলার পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা বালাকোট অভিযানের মতো ঘটনাগুলো যেমন মোদিকে এনে দিয়েছে নির্বাচনী বিজয়, তেমনই এবার বিহারের ভোট ঘিরে ঘনিয়ে আসছে এক নতুন কূটনৈতিক যুদ্ধ— জলের যুদ্ধ।

১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলামের জল ব্যবহারের অধিকার পাকিস্তানের। কিন্তু মোদি সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ভারত একতরফাভাবে এই চুক্তিকে অগ্রাহ্য করার পথে হাঁটছে। মোদি বলছেন, "পাকিস্তান আমাদের জল খায়, অথচ আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত। এবার হিসাব চাই।"

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে— ভারত কি আদৌ পাকিস্তানের পানি বন্ধ করতে পারে? কারণ, এই অঞ্চলের নদীগুলোর জন্ম হিমালয়ের কোলে তিব্বতে, যার নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, সিন্ধু—সব নদীই উদ্ভব তিব্বতে। সেখানেই চীন গত এক দশকে তৈরি করেছে একের পর এক হাইড্রো ড্যাম, যা শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়— বরং এটি এক কৌশলগত জল অস্ত্র।

সতলোজ নদীর স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রবাহ হঠাৎ করে কমে গেছে। ভারত বলছে, তারা কিছু করেনি। তাহলে কে করছে? আঙুল উঠছে চীনের দিকে। চীন শুধু ড্যামই বানাচ্ছে না, বানাচ্ছে এক "জলের মানচিত্র"— যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। এটাই চীনের নতুন স্ট্রাটেজি: ওয়াটার লেভারেজ— জলকে অস্ত্রে পরিণত করে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার।

এদিকে গঙ্গা পানি চুক্তি শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। এখনো নবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং শোনা যাচ্ছে, ভারত রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দিয়ে তা নবায়ন করতে চায়— যাতে বাংলাদেশ চীনের দিকে না ঝোঁকে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী নীতির বিরোধিতা না করে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এসব করলে গঙ্গার প্রবাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। ভারতের রাজনৈতিক মহল প্রকাশ্যে বলছে— "যারা পানি চায়, তাদের আমাদের কথা শুনতে হবে।"

ফলে বাংলাদেশ পড়ে গেছে ত্রিমুখী চাপে—একদিকে ভারতের চাপ, অন্যদিকে চীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও ঝুঁকি, আর তার মাঝখানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। এই অবস্থায় বাংলাদেশ শুধু উপেক্ষিত একটি প্রতিবেশী নয়, বরং হয়ে উঠেছে এক স্ট্র্যাটেজিক গেমপ্লেয়ার।

চীন ইতিমধ্যে ব্রহ্মপুত্রের উপর তৈরি করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্যাম। সতলোজ, সিন্ধু, গঙ্গা— সব নদীর নিয়ন্ত্রণ এখন চীনের হাতে। চীনের বিশেষজ্ঞ ভিক্টর গাও স্পষ্টভাবে বলছেন— ভারত যদি পাকিস্তানের পানি বন্ধ করে, তাহলে চীন ভারতের পানি বন্ধ করবে। এই হুশিয়ারি কেবল সতর্কতা নয়, এটি ভবিষ্যতের নিয়ম।

এই জলযুদ্ধের মাঝেই দাঁড়িয়ে ভারত। মোদি বলছেন, "আমি কিছু করিনি", কিন্তু সবাই ভয় পাচ্ছে। কারণ এখন যুদ্ধ হবে না শুধু গুলি দিয়ে, হবে ড্যামের গেট দিয়ে। ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে লেখা হবে দক্ষিণ এশিয়ার ভাগ্য।

এই মানচিত্রে বাংলাদেশের উপস্থিতি আর ‘ছায়া’ নয়— এটি এখন একটি সক্রিয় ভূমিকা, যাকে প্রয়োজন অনুযায়ী সামনে আনা হবে। আর এই নতুন ভূরাজনীতির একমাত্র প্রশ্ন— এই যুদ্ধে কে জিতবে? পানি, না রাজনীতি? যেকোনো ভুল পদক্ষেপে ভারতকেই হতে হবে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এবার পানিতে ডুববে কেবল ভারত।


ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=C2UHYhSB88A

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×