ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সংস্থার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, গুলির শব্দে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ০৭:২৫, ২৮ মে ২০২৫

গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সংস্থার খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, গুলির শব্দে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা

ছবিঃ সংগৃহীত

গাজা – যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত মানবিক সহায়তা সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র গাজায় কার্যক্রম শুরুর একদিনের মধ্যেই হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সেখানে ভিড় করেন। এতে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

সোমবার রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সহায়তা কেন্দ্রটির নিরাপত্তা প্রাচীর ও কাঁটাতার ভেঙে ফেলেন ক্ষুধার্ত জনগণ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, জনতার ঢলে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পড়েছে এবং অনেকে গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে পালাচ্ছেন।

GHF জানিয়েছে, এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় তাদের টিম পিছু হটে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা সতর্কতামূলক গুলি চালায়।

GHF এর লক্ষ্য হচ্ছে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি খাদ্য ও সহায়তা বিতরণ করা। সংস্থাটি আমেরিকান নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ব্যবহার করে এবং বিতরণকেন্দ্রগুলোর চারপাশে ইসরায়েলি সৈন্যরা টহল দেয়।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা GHF-এর বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে। তারা এটিকে মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে বলেছেন, এতে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে, লোকজনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে এবং মানবিক সহায়তা রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের শঙ্কা রয়েছে।

GHF-এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সোমবার তারা ৮ হাজার খাদ্য প্যাকেট বিতরণ করেছে, যা প্রায় ৪.৬২ লাখ খাবারের সমান। তবে সংস্থাটি দাবি করে, হামাস তাদের বিতরণকেন্দ্রে বাধা দিচ্ছে – যদিও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ দেয়নি।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “প্রথমে ৫০ জন করে ঢুকতে দিচ্ছিল, পরে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে সবাই ঢুকে পড়ে। আমরা শুধু একটু চিনি আর রুটি খুঁজছিলাম।”

GHF-এর একজন কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জেক উড রোববার পদত্যাগ করেন, কারণ তার মতে GHF-এর কার্যক্রম মানবিক নীতিমালা রক্ষা করতে পারছে না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, “GHF-এর বিতরণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” অন্যদিকে, হামাস GHF-এর কার্যক্রম বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে এবং ইসরায়েলি সহায়তা ব্যবস্থাকে ব্যর্থ বলে অভিহিত করেছে।

জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টেফানে দ্যুজারিক বলেন, “আমরা গাজা থেকে আসা ভিডিওগুলো দেখেছি – এটি হৃদয়বিদারক। আমাদের একটি সুসমন্বিত, মানবিক পরিকল্পনা রয়েছে যা নিরাপদভাবে সহায়তা পৌঁছাতে সক্ষম।”

GHF জানিয়েছে, তারা সপ্তাহের মধ্যে গাজার ১০ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে চায়।

ইসরায়েল গত ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং ১৯ মে সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে। এই সময়ে জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী গাজায় অন্তত ৫৪,০৫৬ মানুষ নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে এবং দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা প্রকট। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান বলেন, বর্তমানে সরবরাহ করা সাহায্য “সমস্যার তুলনায় এক ফোঁটা মাত্র”।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×