
ছবি: সংগৃহীত
এই মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চারদিনের সংঘর্ষ শেষ হয়েছে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে। দুই পক্ষই নিজেদের বিজয়ী দাবি করলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প হয়তো এই সংঘর্ষের সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হয়ে উঠেছে।
৭ মে ভারতের "অপারেশন সিন্ধুর" মাধ্যমে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে তথাকথিত "সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে" হামলা চালানোর মাধ্যমে উত্তেজনার সূচনা হয়। এর পেছনে ছিল ২২ এপ্রিল পহেলগামে সংঘটিত একটি ভয়াবহ হামলা, যেখানে পর্যটকসহ ২৬ জন নিহত হন। ভারত এ ঘটনার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান এরপর পাল্টাপাল্টি সামরিক অভিযান চালায়, যাতে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তান চীনের সহায়তায় নির্মিত জে-১০ ও জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে, যা তাদের বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার গভীরতা নির্দেশ করে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্স থেকে সদ্য কেনা রাফাল যুদ্ধবিমানও রয়েছে। ভারত এ দাবি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর এয়ার মার্শাল একে ভরতি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, আমাদের সব পাইলট নিরাপদে ফিরে এসেছে।”
চীনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহারের পর সেটির কর্মক্ষমতা নিয়ে চীনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ঝোউ বো বলেন, “চীনের অস্ত্রশিল্পের জন্য এটি একটি ‘ডিপসিক মুহূর্ত’। এবারই প্রথম চীনা অস্ত্র বাস্তব সংঘর্ষে পরীক্ষিত হলো।”
জে-১০ উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠান অভিক চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য সংঘর্ষের পর সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
তবে সব বিশ্লেষক এই সফলতাকে স্থায়ী বলে মনে করছেন না। লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইগ বলেন, “চীনা যুদ্ধবিমান ভারতীয় রাফালকে পেছনে ফেলেছে কি না, তা এখনো প্রমাণ হয়নি।” তিনি আরও বলেন, ভারত এই অভিযানে অনেক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তেমনভাবে উঠে আসেনি।
ভারতীয় সামরিক বাহিনী জানায়, তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে একযোগে আক্রমণ চালায়, যার মধ্যে ছিল ইসলামাবাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নূর খান ঘাঁটি। এ ছাড়া করাচি থেকে ১৪০ কি.মি. দূরে ভোলারির মতো দূরবর্তী এলাকাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ চীনা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় হামলা ছিল নির্ভুল ও পরিকল্পিত।
চীনের পক্ষ থেকে জে-১০ এর সাফল্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি, তবে সামাজিক মাধ্যমে চীনা নাগরিকদের জাতীয়তাবাদী উল্লাস স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞ কারলোটা রিনাউডো বলেন, “বর্তমানে বাস্তবতার চেয়ে ভাবমূর্তি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই বিবেচনায় চীনই এই সংঘর্ষের মূল বিজয়ী।”
চীন পাকিস্তানে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের আওতায়। ফলে পাকিস্তানের সামরিক সাফল্য চীনের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত।
বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, “ভারত পরিকল্পনায় চীনা প্রভাবের গভীরতা অনুধাবন করতে পারেনি। এই সংঘর্ষে চীন পার্থক্য তৈরি করেছে।”
অস্ত্র রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে শীর্ষস্থান অধিকার করে, আর চীন রয়েছে চতুর্থ স্থানে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে চীনা অস্ত্রের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যদিও আগে সেগুলোকে মানহীন বলে বিবেচনা করা হতো।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৯ সালের এক সংঘর্ষেও ভারত তার একটি মিগ-২১ বিমান হারিয়েছিল, যার পাইলট পাকিস্তানে বন্দি হয়েছিলেন এবং পরে মুক্তি পান।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা-চীনের আধুনিক যুদ্ধ-প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের মুখে ভারতকে তার নিজস্ব প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক ক্রয় আরও জোরদার করতে হবে।
এদিকে, চীনের আধুনিক জে-২০ স্টেলথ ফাইটার ইতোমধ্যে তাদের বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে, যা রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম। ভারতের জন্য এই প্রযুক্তিগত ব্যবধান এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সার্বিকভাবে, চীনের অস্ত্র শিল্প এই সংঘর্ষে বৈশ্বিক নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ওপর আস্থা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: https://shorturl.at/2RgzU
মিরাজ খান