
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমানে হিমশীতল অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন আরও বেড়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য— আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ ও মেঘালয়— নিয়ে জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
সম্প্রতি এই সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলকে ঘিরে ভারতের নতুন পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলেছে। ভারতের সরকার এখন বাংলাদেশের বিকল্প পথ খুঁজতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
গত মার্চ মাসে চীন সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এক বক্তব্যে বাংলাদেশকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘ওসিয়ান অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার এই বক্তব্যের পরই ভারতের পক্ষ থেকে কৌশলগতভাবে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও শীতল হয়েছে। এর ফলে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযোগ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এই অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ মূলত শিলিগুড়ি করিডর—যা 'চিকেনস নেক' নামে পরিচিত—এর ওপর নির্ভরশীল।
এই পরিস্থিতিতে বিকল্প সংযোগ তৈরিতে ভারত নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত একটি চার লেনের হাইওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২,৮৬৪ কোটি রুপি। প্রকল্পটি ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রাস্তা চালু হলে ভ্রমণের সময় সাড়ে আট ঘণ্টা থেকে কমে পাঁচ ঘণ্টায় নেমে আসবে বলে জানানো হয়েছে।
শুধু সড়ক নয়, সমুদ্রপথেও বিকল্প সংযোগ গড়ে তুলছে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে শুরু হয়েছে 'কালাদান মাল্টিমডাল ট্রানজিট প্রজেক্ট'। এই প্রকল্পে কলকাতা সমুদ্রবন্দরকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দর, পালেতোয়া এবং মিজোরামের জোরিনপু পর্যন্ত নদীপথ ও সড়কপথে যুক্ত করা হচ্ছে।
বর্তমানে শিলিগুড়ি করিডর ছাড়া সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগের অন্য দুটি পথ হলো বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে। তবে বাংলাদেশ সরকার বঙ্গোপসাগর হয়ে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে এবং জলপথে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। এর ফলে ভারত বিকল্প সংযোগের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে কালাদান প্রকল্পকে কৌশলগত সমাধান হিসেবে গ্রহণ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপদ সংযোগ নিশ্চিত করতে চাইছে, অন্যদিকে বাংলাদেশকে বাইপাস করার পরিকল্পনাও এগিয়ে নিচ্ছে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=KmNtYEn08qo
এম.কে.