
ছবিঃ সংগৃহীত
হামাস নিশ্চিত করেছে যে, কাতারের দোহায় গাজা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে একটি নতুন আলোচনা পর্ব শুরু হয়েছে। এই ঘোষণা এসেছে এমন সময়ে, যখন ইসরায়েল গাজায় চলমান সহিংসতার মধ্যে “গিডিওনের রথ অভিযান” নামে একটি বড় সামরিক অভিযান শুরু করেছে।
হামাস প্রধানের উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু বিবিসিকে শনিবার জানান, দোহায় আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং এতে কোনো পূর্বশর্ত ছিল না। তিনি বলেন, “সব বিষয়ই আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও আলোচনা চলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হামাসের এই আলোচনায় ফিরে আসা তাদের “আগের অনমনীয় অবস্থান থেকে সরে আসা” নির্দেশ করে। এই আলোচনা এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহল উভয় পক্ষের উপর চাপ বাড়াচ্ছে সহিংসতা বন্ধের জন্য।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার রাতে গাজায় স্থল ও আকাশপথে নতুন অভিযান শুরু করে, যার লক্ষ্য হলো কৌশলগত এলাকাগুলোর দখল নেওয়া ও জিম্মিদের মুক্ত করা। ইসরায়েলের হিব্রু এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে অভিযানটির ঘোষণা দেওয়া হয়।
আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন অংশে ১৫০টিরও বেশি হামাস-সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, অভিযানে হাজার হাজার সেনা গাজায় প্রবেশ করবে, এলাকা দখল করবে, বেসামরিক মানুষদের দক্ষিণে সরিয়ে দেবে এবং হামাসের সহায়তা নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেবে।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগে থেকেই এই অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু তা শুরু হয়নি যতক্ষণ না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেন। তিনি শুক্রবার এলাকা ছেড়েছেন।
হামাস-চালিত সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকে আহত হয়েছে। উত্তর ও মধ্য গাজার বহু এলাকায় বাসিন্দাদের ঘর ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয়, কারণ বহু মানুষ ইতোমধ্যেই বারবার গৃহহীন হয়েছে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজার জনসংখ্যা “চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে” রয়েছে। নাসের হাসপাতালের ব্রিটিশ চিকিৎসক ড. ভিক্টোরিয়া রোজ বিবিসিকে বলেছেন, “শিশুরা খুবই দুর্বল। তাদের দাঁত পড়ে যাচ্ছে। অনেক শিশুর শরীরে গুরুতর দগ্ধের চিহ্ন রয়েছে এবং অপুষ্টির কারণে তারা সহজেই সংক্রমিত হচ্ছে ও সুস্থ হতে পারছে না।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক বলেন, গাজায় চলমান হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে এবং এটি “জাতিগত নিধনের” পর্যায়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, “আবাসিক এলাকায় পরিকল্পিত বোমাবর্ষণ, মানুষের জোরপূর্বক স্থানান্তর এবং মানবিক সহায়তা অস্বীকার—সব কিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।” মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলে এক হামলা চালায় যাতে ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেওয়া হয়। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাস এখনো ৫৮ জন জিম্মিকে আটক করে রেখেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তখন থেকে গাজায় কমপক্ষে ৫৩,০০০ জন নিহত হয়েছে।
দোহায় আলোচনা একদিকে সম্ভাব্য শান্তির আশা জাগালেও, সমান্তরালে চলতে থাকা সামরিক অভিযান ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। মানবিক বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং দ্বিধাগ্রস্ত কূটনীতি সব মিলিয়ে গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আগামী দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
সূত্রঃবিবিসি
নোভা