
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
দশমিনা উপজেলার তেতুলিয়া ও বুড়া গৌরাঙ্গ নদীতে কোটি কোটি টাকার অবৈধ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেনুর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। অবৈধ ওই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকমীর্রা। মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রেনু ব্যবসার সাথে জড়িত সিন্ডিকেটের মূল হোতারা।
সরেজমিনে তেতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী এলাকা ঘুরে এরকম চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিদিন নদী তীরবতীর্ এলাকার শত শত মানুষ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেনু সংগ্রহ করছেন। অবৈধ মশারি জাল দিয়ে গলদা ও বাগদার রেনু সংগ্রহ করার কারণে অন্যান্য শতাধিক প্রজাতির মাছের রেনু পোনা মারা পড়ছে। একারনে সরকার নদীতে রেনু ধরা ও সংরক্ষণ করা এবং মশারি জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান করেছেন। কিন্তু সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নদীতে চলছে অবিরাম রেনু ধরার মহোউৎসব।
বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত জমজমাট অবৈধ রেনুর ব্যবসা চলে নদীতে। তেতুলিয়া নদীর হাজিরহাট এলাকায় মশারি জাল দিয়ে গলদা ও বাগদার রেনু সংগ্রহ করতে আসেন কাটাখালী এলাকার সেকান্দার চৌকিদারের ছেলে আফজাল হোসেন(৪০) স্বপন (৩৬) তামিম হোসেন (৯) তারা প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশো টি বাগদা ও গলদার রেনু পোনা ধরে বাছাই করে রেখে অন্যান্য শতাধিক প্রজাতির মাছের রেনু পোনা মৃত অবস্থায় নদী তীরেই ফেলে যান। ওই বাগদা গলদার রেনু পেনা তারা নদী তীরেই ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার কাছে প্রতিটি রেনু পোনা এক থেকে দের টাকা দরে বিক্রি করেন।
এভাবে প্রতিদিন শত শত মানুষ গলদা ও বাগদার রেনু ধরার নামে শতাধিক অন্যান্য প্রজাতির মাছের রেনু পোনা নিধন করছেন। ভ্রাম্যমাণ ক্রেতারা নদীতীর থেকে সব রেনু ক্রয় করে নিয়ে আসেন আউলিয়াপুর লঞ্চঘাট এলাকায়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ ক্রেতাদের থেকে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা লাখ লাখ রেনু ড্রামে ভরে ট্রাকে করে চালান করা হয় খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দশমিনা উপজেলায় রেনু পোনা সিন্ডিকেটের তালিকায় রয়েছেন দশমিনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বেল্লাল হোসেন (তবে শাহ জামাল ছদ্ম নাম নিয়ে তিনি রেনুর ব্যবসা পরিচালনা করেন),সৈয়দ জাফর এলাকার এসহাক হাওলাদার, মাহাবুল সর্দার,রহমান হোসেন,পাতার চর এলাকার মনির রাঁড়ি, কাটাখালীর তাহের আকন, গুলি আউলিয়াপুরের শামীম হোসেন প্রমুখ।
এছাড়া নিরাপদ রুট হিসেবে পার্শবতীর্ জেলা ভোলা ও দশমিনার চরাঞ্চল থেকেও ট্রলারে করে লাখ লাখ রেনু পোনা বিক্রি করতে নিয়ে আসা হয় দশমিনায়। পুলিশ মাঝে মধ্যে রেনু বোঝাই ট্রাকে অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি অবৈধ রেনুর ব্যাবসা। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতার রেনু ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন রেনু ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানান, বর্তমানে রেনুর ব্যবসা খুবই কম মাছ ও কম পাওয়া যাচ্ছে নদীতে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রেনু না ধরলে খাবে কি নদীতীরের মানুষেরা? তিনি জানান, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে ওই রেনু চালান করা হয়। সৈয়দ জাফর এলাকার রেনু ব্যবসায়ী ইসহাক হাওলাদার বলেন, নদীতে মাছ কম তাই রেনু ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে তাদের। তবে কয়েকজন রেনু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করেই নদীতে রেনু ধরছেন জেলেরা। এব্যাপারে দশমিনা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ফেরদৌস আহমেদ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে রেনু সংগ্রহকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে রেনু পাচারকারীরা পালিয়ে যায় তাই এখনো পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোন রকম পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, ১৫/১৬ কিলোমিটার নদীপথ সব সময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয়না, মানুষ সচেতন না হলে রেনু নিধন বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ, তবে প্রায়ই নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে তিনি জানান। দশমিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল আলীম বলেন, রেনু ব্যবসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সাব্বির