
বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় প্রযুক্তি ‘ওয়াই-ফাই’। দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ, একাধিক ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্যতা এবং তারহীন সুবিধা এসবের জন্যই মানুষ দিন দিন আরও বেশি নির্ভর করছে এই প্রযুক্তির ওপর। তবে রাতভর ওয়াই-ফাই চালু থাকলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে দাবি করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সম্প্রতি জানায়, রাতের বেলায় মাথার পাশে ওয়াই-ফাই রাউটার চালু থাকলে তার থেকে নির্গত তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (EMF) শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। এতে ক্যানসার বা ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
তবে অপরপক্ষের যুক্তিও আছে। বাংলাদেশে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ (NIH) বলছে, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে নির্গত তরঙ্গের কম্পাঙ্ক খুবই কম, যা মানবদেহের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ নয়।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
স্নায়ুরোগ চিকিৎসক ডা. অনিমেষ কর বলেন, ওয়াই-ফাই রাউটারের তরঙ্গ নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন। এর কম্পাঙ্ক ২.৪ থেকে ৫ গিগাহার্টজ, যা বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ নয়। তবে যাদের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেনসিটিভিটি আছে, তারা মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত ও মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন।
হায়দরাবাদের গ্লেনিগলস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. হিরণ এস. রেড্ডিও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ওয়াই-ফাই রেডিয়েশন অত্যন্ত নিম্নমাত্রার এবং মানবদেহে বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবুও কেউ চাইলে রাতে রাউটার বন্ধ রাখতে পারেন, এতে ঘুম ভালো হতে পারে।
ওয়াই-ফাই চালু রাখলে যেসব সমস্যা হতে পারে:
-
ঘুমে ব্যাঘাত
-
মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন
-
মানসিক অবসাদ
-
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেনসিটিভ ব্যক্তিদের অস্বস্তি
-
গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখলে উপকারিতা:
-
ঘুমে উন্নতি
-
মানসিক প্রশান্তি
-
মাথাব্যথা বা অবসাদের উপসর্গ কমে যেতে পারে
-
শরীরে কম তরঙ্গ প্রবেশ করে, যা কিছু মানুষের জন্য স্বস্তির
তবে ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধাগুলোও অস্বীকার করা যায় না:
-
দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ
-
একাধিক ডিভাইসে ব্যবহার
-
কোনো ক্যাবল ছাড়াই ইন্টারনেট সুবিধা
-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পাবলিক জায়গায় সহজ সংযোগ
-
কম খরচে টিপি-লিংক, টেন্ডা, ডি-লিংক ইত্যাদি রাউটার পাওয়া যায়
-
স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপসহ সব ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য
ওয়াই-ফাইয়ের কিছু অসুবিধাও রয়েছে:
-
ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে স্পিড কমে যায়
-
পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি
-
সিগনাল সীমিত (৩০–১০০ মিটার পর্যন্ত)
-
স্বাস্থ্য ঝুঁকির শঙ্কা (যদিও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত)
-
ডিভাইস বেশি হলে ব্যান্ডউইথ দুর্বল হয়
-
নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হলে হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা থাকে
ওয়াই-ফাই বর্তমানে জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন হওয়াও জরুরি। রাতের বেলা রাউটার বন্ধ রাখলে কারও ক্ষেত্রে ঘুমের মান ভালো হতে পারে, কেউ আবার কোনো পার্থক্যই টের পান না। তবে শরীর ও মনের যত্নে প্রযুক্তির ব্যবহার হোক সচেতনতার সাথে।
মিমিয়া