ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

সিলেটে ছোঁয়াচে জাতীয় স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান চিকিৎকদের

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট

প্রকাশিত: ২০:১০, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:১৪, ২৭ জুন ২০২৫

সিলেটে ছোঁয়াচে জাতীয় স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান চিকিৎকদের

ছবিঃ সংগৃহীত

ডেঙ্গু ও করোনার পাশপাশি সিলেটে আলোচনায় রয়েছে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগের প্রবনতা। সিলেটে ব্যাপক হারে ছোঁয়াচে জাতীয় স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া রোগে আক্রান্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই-তিন মাস ধরেই স্ক্যাবিস ছড়িয়েছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। বর্তমানে এর প্রকোপ আরও বাড়ায় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ডাবল ডোজ ওষুধ সেবনের পরও সুফল পাচ্ছেন না রোগীরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, গরম-আর্দ্র পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগ ছড়ানোর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ। বাসার একজনের স্ক্যাবিস হলে কাপড়সহ সবকিছু গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোঁয়ে নেওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।  

বাসা-বাড়িতে একজন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে ওই পরিবারের সকল সদস্য ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। 

চিকিৎকরা বলছেন, স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়ার চিকিৎসায় প্রধানত পারমিথ্রিন বা আইভারমেকটিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, চুলকানি কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন এবং সংক্রমণ কমাতে অ্যান্টি-ইনফেক্টিভ ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার রাখা এবং অন্যদের মধ্যে যাতে রোগ না ছড়ায়, সে জন্য আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা জিনিসপত্র গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। 

স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়া, একটি চর্মরোগ যা সারকোপ্টেস স্ক্যাবিই নামের ক্ষুদ্র মাইট দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং একজনের থেকে অন্যজনে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এটি মারাত্মক হতে পারে।

গত আড়াই মাসে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৩৫৫ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালেও একই অবস্থা।  হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুধু এপ্রিল মাসেই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ২৭১ জন। মে মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৫০-এ। জুন মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ৩ হাজার ৭৩৪ জন। এর মধ্যে ঈদের ছুটিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল ১০ দিন।

চিকিৎসকদের মতে, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া, ঘনবসতি এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব—এসবই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বারবার বন্যা হয়, সেসব অঞ্চলে সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি।  সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, 'চর্মরোগের মধ্যে স্ক্যাবিসই এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য হলেও চিকিৎসা না নিলে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।'  তিনি আরও বলেন, 'গরম ও ঘামে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়। তাই ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা খুব জরুরি।'

স্ক্যাবিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের ঘাটতির কথাও জানিয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ লোশন কিছুদিন ধরে সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলেন, “ওষুধের কিছু মজুত থাকলেও লোশনটি নেই। ফলে চিকিৎসায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলছেন, 'ওষুধের কিছু ঘাটতি আছে। জুন মাসে অর্থবছর শেষ হওয়ায় নতুন করে সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। জুলাই থেকে আবার ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।'  তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দেশে চর্মরোগের মধ্যে স্ক্যাবিস ৬০ শতাংশের মতো। তবে সিলেটে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।'
 

আলীম

×