ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

মেরুদণ্ডের সামান্য বাঁকই ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ!

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৭ জুন ২০২৫

মেরুদণ্ডের সামান্য বাঁকই ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ!

আমাদের শরীরের গঠন ও ভারসাম্য রক্ষায় মেরুদণ্ডের (স্পাইনাল কলাম) গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেক সময় দেখা যায়, এই মেরুদণ্ড স্বাভাবিক সোজা অবস্থান থেকে ডানে বা বাঁয়ে বেঁকে যেতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ অবস্থাকে বলা হয় স্কোলিওসিস। এটি শুধু সৌন্দর্যহানি করে না, বরং দৈনন্দিন চলাফেরা, কাজকর্ম ও মানসিক স্বস্তিতে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

স্কোলিওসিস কী?

মেরুদণ্ডে মোট ৩৩টি হাড় রয়েছে, যা সার্ভাইক্যাল (ঘাড়), থোরাসিক (পিঠ), লাম্বার (কোমর), স্যাক্রাল (নিতম্ব) এবং ককসিজিয়াল (লেজ) এই পাঁচটি ভাগে বিভক্ত। মেরুদণ্ড যখন স্বাভাবিক রেখা থেকে ডানে বা বাঁয়ে কাত হয়ে যায়, তখনই স্কোলিওসিস হয়। সাধারণত ঘাড়, পিঠ ও কোমরের অংশেই এটি বেশি দেখা দেয়।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

স্কোলিওসিস সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে। তবে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যে কোনো বয়সের মানুষের মধ্যেই এই ঝুঁকি থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় দুর্বল হয়, সফট টিস্যু ক্ষয় হতে থাকে, ফলে মেরুদণ্ড বেঁকে যায়।

কেন হয় এই সমস্যা?

দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসও স্কোলিওসিসের কারণ হতে পারে, যেমন:

  • এক পাশে হেলান দিয়ে টিভি দেখা

  • দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে বাঁকা হয়ে কাজ

  • কাত হয়ে ফোমের বিছানায় ঘুমানো

  • গাড়ি চালানোর সময় শরীর বাঁকা রাখা

  • অসমান জায়গায় বসে কাজ করা

এই সব অভ্যাস মেরুদণ্ডের দুই পাশের মাংসপেশিকে দুর্বল করে দেয়, ফলে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতি হারিয়ে যায়।

স্কোলিওসিসের লক্ষণ

  • সোজা হয়ে বসা বা হাঁটতে না পারা

  • শরীরের ভারসাম্য দুই পায়ে সমানভাবে না থাকা

  • এক দিকে হেলে হাঁটা

  • ভারী জিনিস তুলতে না পারা

  • কোমর ও পিঠে ব্যথা

  • সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করতে সমস্যা

  • দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটতে কষ্ট হওয়া

চিকিৎসা ও করণীয়

স্কোলিওসিসের চিকিৎসা শুধু ওষুধেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা ও ব্যায়াম।

চিকিৎসায় যা থাকতে পারে:

  • ফিজিওথেরাপি (বিশেষজ্ঞের পরামর্শে)

  • ব্যথানাশক ও মাসল রিলাক্সেন্টস

  • ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট

  • স্ট্রেচিং, স্ট্রেনদেনিং ও আইসোমেট্রিক ব্যায়াম

  • হোল্ড-রিল্যাক্স ও স্টেবিলাইজেশন এক্সারসাইজ

  • সঠিক ভঙ্গিমায় বসা, দাঁড়ানো ও হাঁটার অভ্যাস

  • দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে না থাকা

  • ভারী বস্তু বহন না করা

  • ঝুঁকে কাজ না করা

স্কোলিওসিস কোনো সাধারণ ব্যথা নয়। সময়মতো সচেতনতা ও চিকিৎসা না নিলে এটি দেহের গঠন বদলে দিতে পারে। তাই ঘাড়-পিঠে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কিংবা শরীরের ভারসাম্যে পরিবর্তন টের পেলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। নিয়মিত ব্যায়াম ও সঠিক জীবনাচরণেই হতে পারে সমাধান।

মিমিয়া

×