ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

অ্যাম্বুলেন্স আছে, চালক নেই: সরকারি সেবা বঞ্চিত রোগীরা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০২:১৭, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০২:১৮, ১৫ জুন ২০২৫

অ্যাম্বুলেন্স আছে, চালক নেই: সরকারি সেবা বঞ্চিত রোগীরা

ছবিঃ জনকণ্ঠ

গত ছয় মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালক না থাকায় প্রতিনিয়ত সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মুমূর্ষ রোগীরা। অযত্ন অবহেলায় সরকারি একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল চত্বরে পরে থাকায় ধুলো বালিতে একাকার হয়ে পরেছে।

শুধুমাত্র একজন চালকের অভাবে জরুরি চিকিৎসার জন্য মুমূর্ষ রোগীদের অন্যকোন হাসপাতালে পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি কোনো কাজেই আসছে না।

ফলে বাধ্য হয়ে মুমূর্ষ রোগীর স্বজনদের অতিরিক্তমূল্যে দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবার। যা দিনে দিনে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে করে চরম বিপাকে পরেছেন মধ্য ও নিন্মবিত্ত পরিবারের রোগীর স্বজনরা।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বরিশাল শহরের হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যেতে এখন ১৫শ' থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। যেখানে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকাকালীন সময় মাত্র ছয়শ' টাকা ফিতে নেওয়া হতো।

তারা আরও জানান, অনেক সময় উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার পর চিকিৎসকেরা মুমূর্ষ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শহরের হাসপাতালগুলোতে রেফার্ড দিলেও দরিদ্র রোগীদের স্বজনদের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। 

রোগীর স্বজন আরাফাত রহমান বলেন, আমার বোনের সিজার করতে হবে বলে উপজেলা হাসপাতাল থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকেরা রেফার্ড করেন। কিন্তু হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক নেই শুনে পাশের একটি বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স ডেকে ১৬শ' টাকা ভাড়ায় বোনকে বরিশালে আনা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স বলেন, অ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু চালক নেই। এটা শুধু বিব্রতকর না, ভয়াবহ। অনেক সময় মুমূর্ষ রোগীর স্বজনরা আমাদের কাছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা বলি, অ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু চালক নেই। তাই তাদের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার কথা বললে তারা (রোগীর স্বজন) ভাবে অন্যকোন কারণে আমরা মিথ্যা বলছি।

এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফকরুল ইসলাম মৃধা বলেন, প্রতিমাসে অ্যাম্বুলেন্স চালক চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পত্র দিয়ে আসছি। কিন্তু পদায়নের কোন উদ্যোগ নেই। অস্থায়ী চালক নিয়োগের বিষয়েও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমোদন লাগবে। সেই অনুমোদনও পাওয়া যায়নি। যেকারণে নিরূপায় হয়ে চালকের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বানারীপাড়া উপজেলা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক কাজী আব্দুর রহমানকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়। সেই থেকে অদ্যবর্ধি অ্যাম্বুলেন্স চালকের পদটি শুণ্য রয়েছে। 

অপরদিকে মাতৃ-প্রসূতি সেবায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার অর্জন করা বানারীপাড়া উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। চালকের অভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা অচলের পাশাপাশি এখানে বিশেষজ্ঞসহ ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র আটজন।

অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনী চিকিৎসক না থাকায় গত আট মাস ধরে হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। গাইনী, মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞ তিনটিপদ দীর্ঘদিন ধরে শুণ্য রয়েছে। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসা সেবা অনেকটা মুখ থুবরে পরেছে।

আলীম

আরো পড়ুন  

×