
বদহজম বা পেটে গ্যাস জমে ফুলে যাওয়া এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। ভারী খাবারের পর, হঠাৎ দিনের মাঝে বা ঘুম কম হলে অনেকেই এই অস্বস্তিকর সমস্যা অনুভব করেন। এই সমস্যা শুধু শারীরিক অস্বস্তি নয়, তা মন-মেজাজ খারাপ করে দেয়, কাজের উৎসাহ কমায়, এমনকি আত্মবিশ্বাসেও আঘাত হানে।
তবে আশার কথা হলো, এই বিরক্তিকর সমস্যার সহজ ও কার্যকর সমাধান আছে তাও আবার ঘরোয়া উপায়ে। হার্ভার্ড থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ড. সৌরভ শেঠি সম্প্রতি তার ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে এমনই চারটি কার্যকর কৌশলের কথা জানিয়েছেন, যেগুলো সহজে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রয়োগ করা সম্ভব এবং যেগুলো কার্যকরভাবেই কমাতে পারে পেটে গ্যাস জমে ফুলে যাওয়ার সমস্যা।
পেঁপে বা কিউই খেলেই মুক্তি মিলবে গ্যাস থেকে
ড. শেঠি জানাচ্ছেন, পেঁপে ও কিউই এই দুটি ফল প্রাকৃতিক হজম-উপকারী এনজাইমে সমৃদ্ধ। পেঁপেতে রয়েছে পাপেইন, যা প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, সেইসঙ্গে পেটে আটকে থাকা গ্যাস মুক্ত করতেও সহায়ক। অপরদিকে, কিউইতে আছে অ্যাক্টিনিডিন নামের একটি যৌগ, যা পাকস্থলীর খাবার খালি হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই ভারী খাবারের পর এই দুই ফল খেলে সহজে হজম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা অনেকটাই কমে।
খাবার পর ১০ মিনিট হাঁটলেই হজম হবে ভালো
কেবলমাত্র ১০-১৫ মিনিট হাঁটা এতটুকুই যথেষ্ট আপনার হজম প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে। ড. শেঠির মতে, হাঁটার মাধ্যমে শরীরে পেরিস্টালসিস বা অন্ত্রের স্বাভাবিক চলাচল সক্রিয় হয়, যা খাবার ও গ্যাসকে দ্রুত পাচনতন্ত্রে চালিত করে। এর ফলে খাবার পাকস্থলীতে বেশি সময় আটকে থাকে না, পেট ফাঁপা বা ব্যথা কমে আসে। পাশাপাশি হাঁটার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালনও বাড়ে, যা সামগ্রিক হজমের জন্য উপকারী।
পিপারমিন্ট চা: আরাম দেবে পেটের টানটান ভাব
প্রাচীনকাল থেকেই পিপারমিন্ট ব্যবহার হয়ে আসছে পেটের অস্বস্তি কমাতে। এতে থাকা মেনথল একটি প্রাকৃতিক মাসল রিল্যাক্স্যান্ট, যা অন্ত্রে তৈরি হওয়া খিঁচুনিকে কমায় এবং পেট ফাঁপার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। ড. শেঠি বলেন, হালকা গরম পিপারমিন্ট চা খেলে শুধু গ্যাস নয়, পেটের চাপ ও হালকা বমিভাব থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
সিমেথিকন ট্যাবলেট: বহু মানুষই জানেন না এর উপকারিতা
সিমেথিকন হলো একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ, যা গ্যাসের বুদবুদগুলো একত্র করে সহজে নির্গত হতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ না করলেও দ্রুত স্বস্তি দেয় গ্যাসের কারণে হওয়া চাপ কমিয়ে। ড. শেঠির মতে, এটি দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান না হলেও, তাৎক্ষণিক উপশমে বেশ কার্যকর বিশেষ করে খাবারে সামান্য পরিবর্তন আনলে এর কার্যকারিতা বাড়ে।
এই উপায়গুলো কেবল ঘরোয়া টোটকা নয়, বরং হজম প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই সাজানো। ড. সৌরভ শেঠি পুষ্টিবিদ্যার সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমন্বয়ে সহজ, কার্যকর এবং বাস্তবসম্মত কিছু সমাধান দিয়েছেন, যা প্রতিদিনের জীবনেই প্রয়োগ করা সম্ভব।
তাই পরবর্তীবার যদি হঠাৎ করে পেট ফেঁপে যায় বা গ্যাস জমে অস্বস্তি শুরু হয়, তখনই একটা কিউই খেয়ে ফেলুন, ১০ মিনিট হাঁটুন, আর পিপারমিন্ট চা ফোটাতে দিন চুলায়। শরীরকে জানান দিন আপনি তার যত্ন নিচ্ছেন।
সূত্র:https://tinyurl.com/6wnrekrb
আফরোজা