ছবিঃ সংগৃহীত
তীব্র গরমে পানিশূন্যতা তৈরি হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া লবণ ও পানির অভাব দ্রুত পূরণেও অনেক সময় ওরস্যালাইন বা মুখে খাবার স্যালাইন দেয়া হয়।
তবে অনেকেই স্যালাইন পান করার সঠিক নিয়ম জানেন না।
নিয়ম মেনে অর্থাৎ আধা লিটার বিশুদ্ধ পানিতে এক প্যাকেটের পুরোটা গুলিয়ে নিতে হবে। আবার একবার গুলিয়ে নিলে ছয় ঘণ্টার বেশি রাখা যাবে না খাবার স্যালাইন। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার অর্থাৎ ৫০০ এমএল পানিতে গুলিয়ে নিতে হবে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে একগ্লাস পানিতে কিংবা ২৫০ এমএল পানিতে স্যালাইন গুলিয়ে পান করছেন। এটি মোটেও উচিত নয়।
এক প্যাকেট স্যালাইন অবশ্যই আধা লিটার পানিতে গুলাতে হবে। কারণ, আমাদের শরীরে যে পানি আছে তার সমকক্ষ করতে হলে আমাদের আধা লিটার পানিতেই স্যালাইন গুলাতে হবে। নয়তো শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
যখন আমরা কম পানিতে স্যালাইন পান করি তখন আমাদের শরীরের পানির থেকে এটি আরও ঘন হয়ে যায়। আর ঘন স্যালাইন আমাদের শরীর থেকে পানি টেনে নিয়ে একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আসতে চায়, যার ফলে তখন শরীরে আরও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। একইভাবে কেউ যদি আধা লিটার পানিতে এক প্যাকেটের পরিবর্তে দুই প্যাকেট স্যালাইন দেয় তবেও শরীরের ক্ষতি হবে। তাই প্যাকেটের গায়ে যে নিয়ম রয়েছে, সেভাবেই স্যালাইন পান করতে হবে।
অতিরিক্ত স্যালাইন পানে শরীরের ক্ষতি
অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে কোষের ভেতর পানিশূন্যতা তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে কোষের ভেতর ফ্লুইডের ঘনত্বও বেড়ে যায়। যার কারণে রক্তপাত হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় হাইপারনেট্রেমিয়া। এতে শরীর আরও পানি হারাতে থাকবে এবং পানিশূন্যতা আরও বেশি হবে। ঠিক যেমন সাগরের পানি খেয়ে তৃষ্ণা আরও বেড়ে যায় তেমনি, কারণ সাগরের পানিও হাইপারটনিক। তাই অতিরিক্ত স্যালাইন পানিশূন্যতা পূরণের চেয়ে তা আরও বাড়িয়ে দেবে, যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে।
স্যালাইনের উপাদানে সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। ফলে অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে রক্তে ইলেকটোলাইট ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। যার কারণে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ার ফলে রক্তে লবণের পরিমাণ বেড়ে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। আবার অকারণে স্যালাইন খাওয়াও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গরমে স্যালাইন খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাজিরুম মুবিন জানান, গরমে ভালো থাকার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে কোনোভাবেই পানিশূন্য হওয়া যাবে না। আর এজন্য আমাদের খাবার পানি খেতে হবে। এছাড়া ঘরে বানানো ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে। তবে জুসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিনির ব্যবহার পরিহার করতে হবে। বাইরের খোলা জায়গা থেকে জুস খাওয়া যাবে না।
পানিশূন্যতার কিছু লক্ষণ আছে। তৃষ্ণার্ত বোধ করা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়া ইত্যাদি পানিশূন্যতার লক্ষণ। আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ না হলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। অবসন্নতা, ক্লান্তি, মাংসপেশির অসারতা, মাথাব্যথা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। তাই গরমে প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে।
মুমু
