ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্বে সবচেয়ে দামি ও বিপজ্জনক রক্ত কী, কেন এত বিরল?

প্রকাশিত: ১৬:২৩, ১৫ জুন ২০২৫

বিশ্বে সবচেয়ে দামি ও বিপজ্জনক রক্ত কী, কেন এত বিরল?

ছবি: সংগৃহীত

আমরা সাধারণভাবে রক্তের চারটি প্রধান গ্রুপ—এ, বি, এবি এবং ও সম্পর্কে জানি। এই গ্রুপগুলোর আবার প্রতিটি ভাগে রয়েছে পজিটিভ ও নেগেটিভ ভাগ, যা নির্ধারিত হয় আরএইচ ফ্যাক্টর (Rh factor)-এর ভিত্তিতে।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এসব পরিচিত রক্ত গ্রুপের বাইরে আরও একটি অতীব বিরল রক্তের অস্তিত্ব রয়েছে? এর নাম ‘গোল্ডেন ব্লাড’ বা বাংলায় বলা চলে ‘সোনালি রক্ত’। এই রক্ত এতটাই বিরল যে, বিশ্বজুড়ে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের শরীরেই এটি পাওয়া গেছে।

🧬 'গোল্ডেন ব্লাড' কী?

১৯৬১ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে চিকিৎসকেরা এমন এক ধরনের রক্ত আবিষ্কার করেন, যেখানে আরএইচ ফ্যাক্টরের একটিও অ্যান্টিজেন উপস্থিত ছিল না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এটি পরিচিত Rh-null নামে।

সাধারণত মানুষের দেহে ৬১ ধরনের Rh অ্যান্টিজেন থাকে। গোল্ডেন ব্লাডধারীদের শরীরে এসবের কোনওটাই থাকে না। ফলে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ও জটিল রক্ত গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত।

🧪 কেন এমন বিরল হয় এই রক্ত?

এই বিশেষ ধরনের রক্ত মূলত জিনগত কারণে হয়। যদিও এটি বংশপরম্পরায় চলতে পারে, কিন্তু কখনও কখনও কয়েক প্রজন্ম পর হঠাৎ কারও মধ্যে দেখা দিতে পারে।

🔬 কাদের রক্ত গ্রহণ করতে পারেন গোল্ডেন ব্লাডধারীরা?

গোল্ডেন ব্লাডধারীদের জন্য বিপদ এখানেই—তারা শুধুমাত্র অন্য Rh-null রক্তধারীর কাছ থেকেই রক্ত নিতে পারেন। পৃথিবীতে এই রক্তের অধিকারীর সংখ্যা মাত্র ৪৩ থেকে ৫০ জন। এদের মধ্যে মাত্র ৯ জন নিয়মিত রক্তদান করেন।

অন্য কোনও সাধারণ রক্ত গ্রুপ নেওয়া তাদের জন্য মারাত্মক বিষক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই মানুষদের জীবন অনেক বেশি সতর্কতাপূর্ণ।

💉 কেন গোল্ডেন ব্লাড সবচেয়ে দামি?

বিশ্বে যেকোনো রক্ত গ্রুপের ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারেন গোল্ডেন ব্লাডধারীরা, যদিও নিজের জন্য পেতে পারেন না কারও রক্ত। এই রক্ত বিরল ও জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা একে 'গোল্ডেন ব্লাড' উপাধি দিয়েছেন।

এই রক্তের দাম অর্থমূল্যে হিসাব করাও কঠিন, কারণ এর মূল্য নির্ধারিত হয় জীবনরক্ষার ভিত্তিতে।

🚨 সতর্ক জীবনযাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোল্ডেন ব্লাডধারীদের সর্বদা সাবধানতার সঙ্গে জীবন যাপন করতে হয়। কারণ, একটি ছোট দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচারেই রক্তের প্রয়োজন হলে তা জোগাড় করা অত্যন্ত দুরূহ।

📌 সংক্ষিপ্ত তথ্য: গোল্ডেন ব্লাড (Rh-null)

🌍 বিশ্বে মাত্র ৪৩–৫০ জনের শরীরে এই রক্ত পাওয়া গেছে

🧬 Rh ফ্যাক্টরের ৬১টি অ্যান্টিজেনই অনুপস্থিত

🔁 শুধুমাত্র Rh-null রক্তই গ্রহণ করা সম্ভব

💉 যেকোনো রক্ত গ্রুপের মানুষকে রক্ত দিতে সক্ষম

⚠️ সাধারণ রক্ত গ্রহণ করলে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি

💰 চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দামি রক্ত

এই তথ্যটি জানানো জরুরি, কারণ আজকের বিশ্বে রক্তদানের সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিরল রক্তের গুরুত্ব বোঝাটাও সমান জরুরি।

আঁখি

×