ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাঁচ বছরে ২৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু: রহস্য উন্মোচিত প্লেগ মহামারির, যেভাবে টিকে আছে আজও

প্রকাশিত: ০১:৫৬, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ০২:০০, ৪ জুন ২০২৫

পাঁচ বছরে ২৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু: রহস্য উন্মোচিত প্লেগ মহামারির, যেভাবে টিকে আছে আজও

ছবি: সংগৃহীত (সিএনএন)

বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর রোগ ‘প্লেগ’ কীভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষকে সংক্রমিত করে গেছে—তার কারণ অবশেষে খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, মাত্র একটি জিনের পরিবর্তনের মাধ্যমেই প্লেগ ব্যাকটেরিয়া Yersinia pestis মানবদেহে টিকে থাকতে এবং সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হয়েছিল আরও বহু বছর।

প্লেগ প্রথমবার ইউরোপে ১৩৪৭-১৩৫২ সালের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইতিহাসে এই মহামারি ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত, যা মাত্র পাঁচ বছরে ২৫ মিলিয়নের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছিল। অথচ এই মৃত্যুযজ্ঞই ছিল না শেষ কথা। প্লেগ ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে এমনভাবে অভিযোজিত করেছিল, যাতে মৃত্যুর আগেই মানুষ আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।

একটি জিন বদলে দেয় ইতিহাস

Science’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাটি বলছে—প্লেগ ব্যাকটেরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন pla, যেটি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে, তার কপি সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে প্লেগের একটি কম প্রাণঘাতী রূপ তৈরি হয়। এই দুর্বল রূপটি আক্রান্তকে আরও কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখত—ফলে সংক্রমণ ছড়াত বেশি দূর পর্যন্ত।

গবেষক রাভনীত সিদ্ধু জানান, pla জিন রক্ত জমাট বাঁধা ভেঙে দিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে। এই ক্ষমতাই প্লেগকে ভয়ানক প্রাণঘাতী করেছিল।

তবে দুর্বল রূপের প্লেগ সময়ের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, বর্তমানে যে Y. pestis সক্রিয় রয়েছে তা আবার আগের মতোই ভয়ংকর।

চূড়ান্ত মৃত্যু নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণই ছিল কৌশল!

গবেষণায় দেখা যায়, যে ব্যাকটেরিয়া কম pla কপি বহন করে, তা দু’দিন বেশি সময় নেয় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে এবং ১০-২০% বেশি বাঁচার সুযোগ দেয় আক্রান্তদের। ফলে এই ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময় পেত অনেক বেশি।

‘এপিডেমিক বার্নআউট’ ও আধুনিক মহামারির সঙ্গে মিল

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি ধরনের ‘epidemic burnout’—অর্থাৎ মহামারির শুরুতে হঠাৎ করে মৃত্যু বাড়লেও, ধীরে ধীরে সংক্রমণ ক্ষমতা বজায় রেখে রোগটি তার ভিন্ন রূপে দীর্ঘ সময় টিকে থাকে।

ড. ডেবোরা অ্যান্ডারসন, যিনি পশুচিকিৎসা বিষয়ে প্লেগ গবেষণা করেন, বলেন—'এই গবেষণা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে কেন কিছু প্লেগ প্রজাতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কীভাবে তা প্রাণীর দেহে বা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।’

আজও সক্রিয় রয়েছে Yersinia pestis

এখনো প্রতিবছর এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার কিছু অঞ্চলে প্লেগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। যদিও বর্তমানে এটি অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য, তবুও গবেষকেরা মনে করেন, অতীতের সংক্রমণপদ্ধতি বুঝে ভবিষ্যতের মহামারি রোধে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।

গবেষণা শেষ করে রাভনীত সিদ্ধু বলেন, ‘প্লেগ আমাদের শেখায়—একটি রোগ কেবল তার প্রাথমিক প্রভাব দিয়েই শেষ হয় না। দীর্ঘ সময় ধরে এটি তার রূপ বদলাতে থাকে, যেমনটি আমরা Covid-19-এর ক্ষেত্রেও দেখেছি।’

একটি ছোট্ট জিনের পরিবর্তন বদলে দিয়েছিল মহামারির ইতিহাস—প্লেগের রহস্য এখন অনেকটাই পরিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে।

 

সূত্র: সিএনএন।

রাকিব

×