ছবি: সংগৃহীত
সকালের শুরুটা যদি হয় এক টুকরো টাটকা পেঁপে দিয়ে, তাহলে তা শুধু সুস্বাদু নয়, বরং শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। অনেকেই একে সাধারণ ফল মনে করলেও, খালি পেটে খাওয়া পেঁপে শরীরে যেভাবে কাজ করে, তা জানলে আপনি অবাক হবেন। চলুন দেখে নিই খালি পেটে পেঁপে খাওয়ার ১০টি উপকারিতা—
১. লিভারকে জাগিয়ে তোলে প্রাকৃতিক ডিটক্স এনজাইম দিয়ে
পেঁপেতে থাকা 'চাইমোপাপাইন' নামক এক বিশেষ এনজাইম লিভারের বিষাক্ত উপাদান পরিশোধনে সাহায্য করে। সকালের শুরুতে খেলে এটি বেটা-ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সঙ্গে মিলেমিশে লিভারের ডিটক্স প্রক্রিয়া সক্রিয় করে তোলে।
২. কোমলভাবে কোলন পরিষ্কার করে, দূর করে সকালবেলার ফাঁপা ভাব
পেঁপেতে আছে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয় ধরনের আঁশ। এটি খালি পেটে খেলে কোলনের পুরোনো বর্জ্য সহজে বেরিয়ে যায় এবং পেট ফাঁপা বা ভারী ভাব কমে যায়।
৩. রক্তে চিনির মাত্রা না বাড়িয়ে মৃদু শক্তি জোগায়
পেঁপের গ্লাইসেমিক সূচক তুলনামূলকভাবে কম (প্রায় ৬০)। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ধীরে ধীরে রক্তে মিশে শক্তি জোগায়, কিন্তু ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় না।
৪. পাকস্থলীর অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করে
পেঁপে হজমের পর দেহে ক্ষার উৎপন্ন করে, যা অতিরিক্ত অম্লতা কমাতে সাহায্য করে। যারা সকালে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
৫. শরীরের ভেতর থেকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়
পেঁপেতে থাকা ভিটামিন সি ও লাইকোপেন কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক। খালি পেটে খেলে এই উপাদানগুলো সহজে শোষিত হয়, যা ত্বককে করে তোলে টানটান ও প্রাণবন্ত।
৬. হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
পেঁপে ভরপুর ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই এবং দস্তায় (জিঙ্ক) সমৃদ্ধ। দিনের শুরুতে এসব উপাদান হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. দেহের প্রদাহ কমায়, জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ায়
চাইমোপাপাইন ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামক উপাদানগুলো শরীরের প্রদাহ কমিয়ে আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট ব্যথায় স্বস্তি দেয়। সকালের শুরুতে খেলে এটি সারা দিনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
৮. আয়রন শোষণে সহায়তা করে
পেঁপেতে আয়রন না থাকলেও এটি আয়রন শোষণে সহায়ক। বিশেষ করে যদি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন– মুগডাল, ছোলা বা খেজুর) খাওয়ার আগে পেঁপে খাওয়া হয়, তবে শরীর তা ভালোভাবে গ্রহণ করে।
৯. লসিকা প্রবাহ সক্রিয় করে
সকালের শুরুতে খাওয়া পেঁপে শরীরের লসিকাতন্ত্রকে সক্রিয় করে তোলে, যা ফোলা ভাব, ক্লান্তি ও মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
১০. দিনের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের সূচনা করে
খালি পেটে স্বাস্থ্যকর কিছু খাওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কে একটি ইতিবাচক সংকেত যায়। এতে সারা দিন স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যকর হলেও, তা হতে হবে পরিমিত। সেই সঙ্গে প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করা, শাকসবজি ও সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাটাও জরুরি।
পেঁপে শুধু পেট নয়, পুরো শরীরের জন্যই এক শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপহার। দিনের শুরুটা যদি হয় এটি দিয়ে, তাহলে সুস্থতার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যায় নিশ্চিতভাবেই।
আবির
