ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাসিক নিয়ে অজ্ঞতার কারণে বাড়ছে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৮ মে ২০২৩

মাসিক নিয়ে অজ্ঞতার কারণে বাড়ছে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি

ছবি: সংগৃহীত।

নারী জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা (মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন)। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে চান না, লজ্জা পান এবং বিষয়টিকে ব্যক্তিগত বলে মনে করেন। 

মাসিক নিয়ে অজ্ঞতার কারণে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সে কারণে ২০১৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে ২৮ মে পালিত হয়ে আসছে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস।

আজ বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য— ‘২০৩০ সালের মধ্যে পিরিয়ডকে জীবনের একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা’।

মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। কৈশোরকাল থেকেই এ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি হওয়াটা জরুরি। কৈশোরকাল ভয়ভীতিহীন আনন্দে চলার বয়স। কিন্তু এ সময়েই কিশোরীরা কতগুলো রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হন। কিছু ট্যাবু ও কুসংস্কার তাদের এ সময়টাকে বিষাদময় করে তোলে। বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মাঝে শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা সমাজের মানুষের কাছে অস্বাভাবিক ঠেকে।

দেশের একটি বড় অংশ কিশোরীদের এ সময়কে বুঝতে বা জানতে চেষ্টা করে না। আর এখান থেকেই একজন নারীর জীবনে শুরু হয় ভয়ের সংস্কৃতি।

বয়ঃসন্ধিকালে একজন কিশোরী জীবনের প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা লাভ করেন। সাধারণত ১১-১৪ বছর বয়সের যে কোনো সময় একজন কিশোরীর মাসিক বা ঋতুস্রাব হতে পারে, যা প্রায় ৪৯ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু আমাদের সমাজে মাসিক নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয় না, মাসিককে লজ্জার বিষয় হিসেবে ধরা হয় এবং শিক্ষিত সমাজের অনেকেও পিরিয়ডসংক্রান্ত আলোচনা এড়িয়ে যান। ফলে একজন কিশোরী হঠাৎ করেই যখন জামা-কাপড়ে রক্তের উপস্থিতি দেখেন, তখন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, নিজেকে গুটিয়ে নেন। হাস্যোজ্বল মেয়েটি রাতারাতি হয়ে যান গৃহবন্দি। পরিবার বা প্রতিষ্ঠান যেহেতু এ বিষয়ে তাকে কোনো শিক্ষা দেয়নি, তাই এমন পরিস্থিতিতে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। কার কাছে কী বলবেন, কীভাবে বলবেন– তা বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে মাসিকের সময় কীভাবে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, ব্যবহার্য উপকরণ ও খাদ্যতালিকা কী হবে– এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে তিনি থাকেন একেবারেই অজ্ঞ।

ইয়ুথ প্ল্যানেটের নিজস্ব সমীক্ষায় আমরা দেখেছি,বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৯৮ শতাংশ পরিবারের অভিভাবকরা সন্তানদের সঙ্গে মাসিক নিয়ে কোনো উন্মুক্ত আলোচনা করেন না। আমাদের প্রকল্প অঞ্চলের প্রায় ২০০০ নারী ও কিশোরীর ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, মাত্র ১০-১২ শতাংশ মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড বা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কাপড় ব্যবহার করেন। বেশিরভাগ নারীরা পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেন কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। এমনকি অধিকাংশ নারীদের মাঝে মাসিক নিয়ে রয়েছে বিস্তর কুসংস্কার।

ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র ১০ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া কিশোরী তাদের মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে। ৮৬ শতাংশ কিশোরী পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করে। এর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ মেয়ে সঠিক নিয়ম মেনে কাপড় ব্যবহার করে। বাকিরা ঘরের কোণায় কাপড় রাখে, যা সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করার আগেই ফের ব্যবহার করে।

২০২১ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ফার্মেসিতে যেতে লজ্জা পাওয়ার কারণে, পরিবারের অসহযোগিতার কারণে এবং বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে মাসিক সুরক্ষাপণ্য ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করে।

এমএম

×