
সংগৃহীত
করোনাকালে বিশ্বব্যাপী কর্মজীবনে এক নতুন নেতৃত্বের যুগের সূচনা হয়েছিল। কর্মীরা যখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং রিমোট ওয়ার্কের মতো নতুন বাস্তবতায় জর্জরিত, তখন তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় একদল সহানুভূতিশীল, নমনীয় এবং মানবিক নেতাকে। সেই সময় "নাইস বস"– অর্থাৎ সহানুভূতিশীল, সবার প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন নেতৃত্বের আদর্শ।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে বাস্তবতা। আজ, নানা খাতে নেতৃত্বে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ধারা। আগের সেই সহানুভূতিশীল নেতৃত্ব থেকে সরে এসে অনেক ব্যবস্থাপক এখন ফলাফল-ভিত্তিক, সরাসরি , স্পষ্টভাষী ও আত্মমর্যাদাশীল নেতৃত্বকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। নেতৃত্বে পরিবর্তনের নতুন ধারা: ‘নাইস বস’ থেকে দৃঢ় ও ফলাফলমুখী নেতৃত্বে ঝুঁকছেন ব্যবস্থাপকরা
বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বের ধরনে আসছে দৃশ্যমান পরিবর্তন।
করোনাকালীন সংকটে সহানুভূতিশীল ও নমনীয় “নাইস বস” মডেল জনপ্রিয় হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠানেই ব্যবস্থাপকরা সেই ধরন থেকে সরে এসে স্পষ্টভাষী ও আত্মমর্যাদাশীল ও ফলাফল-ভিত্তিক নেতৃত্বের দিকে ঝুঁকছেন।
নেতৃত্বের এই পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেছেন সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে লেখক ক্যারোলিন ক্যাস্ট্রিলনের মতে ”অতি মাত্রায় ভালো” হতে গিয়ে অনেক নেতাই সিদ্ধান্তহীনতা, শৃঙ্খলার অভাব এবং কর্মীদের দায়বদ্ধতা হ্রাসের মতো সমস্যায় পড়েছেন। এখন সফল নেতৃত্বের জন্য প্রাধান্য পাচ্ছে স্পষ্টতা, সময়মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রদান।
এখন প্রশ্ন হলো “ভালো নেতা” মানেই কি নরম নেতা ?” করোনাকালে কর্মীদের মানসিক চাপ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও রিমোট ওয়ার্ক পরিস্থিতির কারণে মানবিক নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা ছিল অত্যন্ত বেশি। সে সময় “নাইস বস” অর্থাৎ সহানুভূতিশীল ও নমনীয় নেতা হয়ে ওঠেন আদর্শ। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এমন নেতৃত্বে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
যেমন দায়িত্বজ্ঞান হ্রাস তথা কর্মীদের ভুল বা সময়মতো কাজ না করাকে উপেক্ষা করা হয়। সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টায় জরুরি সিদ্ধান্তে দেরি হয়। খুব বেশি নমনীয় নেতাদের অনেক সময় টিম দুর্বলভাবে দেখে যা নেতৃত্বের মর্যাদা কমিয়ে দেয় ।
আধুনিক কর্মক্ষেত্রে সফল নেতা হওয়ার জন্য আবশ্যক কিছু গুণাবলি; পরিষ্কার প্রত্যাশা নির্ধারণ ,কাজের লক্ষ্য ও মানদণ্ড স্পষ্টভাবে উপস্থাপন।দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত, সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নেতৃত্বের দক্ষতা ফুটিয়ে তোলা। পারস্পরিক সম্মান ও পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা। যদিও দৃঢ়তা এখন নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিক, তবুও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা এখানে অপরিহার্য। নেতাকে অবশ্যই নিজের আবেগ বুঝে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং কর্মীদের অনুভূতিও উপলব্ধি করতে জানতে হবে
বর্তমান কর্মজীবনে ‘নাইস বস’ হওয়ার চেয়ে ‘দৃঢ়, বাস্তববাদী ও আবেগীয়ভাবে বুদ্ধিমান’ নেতা হওয়াই বেশি কার্যকর। নেতৃত্বের এই ভারসাম্যপূর্ণ রূপই কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখে।
হ্যাপী