
কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ ছিল রাজনৈতিক উত্তেজনা, শিল্পীসুলভ প্রতিবাদ এবং বিশ্ব বাস্তবতার প্রতিফলনের এক অনন্য মঞ্চ। উৎসবের মাঝপথে হলিউড রিপোর্টারের একটি শিরোনাম প্রশ্ন তোলে: "১৯৬৮ সালের পর এটিই কি সবচেয়ে রাজনৈতিক কান উৎসব?" যদিও ১৯৬৮ সালের মতো চরম ঘটনা ঘটেনি, তবে এবারের উৎসবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ফ্যাসিবাদবিরোধী বক্তব্য এবং বিশ্ব পরিস্থিতির প্রতিফলন স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
উৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিভাজন ও সামাজিক অস্থিরতা বিদ্যমান। এই প্রেক্ষাপটে, নিচে উল্লেখিত ১৩টি চলচ্চিত্র কান ২০২৫-এর সেরা নির্বাচিত হয়েছে, যা সমসাময়িক বাস্তবতা ও মানবিক অনুভূতির প্রতিচ্ছবি।
১. 'ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট' (It Was Just an Accident)
ইরানি পরিচালক জাফর পানাহির এই চলচ্চিত্রটি পাম দ’অর জিতে নিয়েছে। একজন ব্যক্তি তার পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণে গিয়ে একটি দুর্ঘটনার শিকার হন। একজন মেকানিক তাকে চিনে ফেলে এবং প্রতিশোধ নিতে তাকে অপহরণ করে। এই থ্রিলারটি রাজনৈতিক নিপীড়ন ও মানবিক প্রতিশোধের এক গভীর চিত্র তুলে ধরে।
২. 'এডিংটন' (Eddington)
অ্যারি অ্যাস্টারের এই চলচ্চিত্রটি একটি ছোট শহরের শেরিফ ও মেয়রের মধ্যে সংঘাতের মাধ্যমে আমেরিকার বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজনকে তুলে ধরেছে। জোয়াকিন ফিনিক্স ও পেদ্রো পাসকালের অভিনয় এই চলচ্চিত্রকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।
৩. 'হানি ডোন্ট!' (Honey Don’t!)
ইথান কোয়েন ও ট্রিসিয়া কুকের এই চলচ্চিত্রটি একটি লেসবিয়ান বি-মুভি ট্রিলজির দ্বিতীয় কিস্তি। মার্গারেট কোয়ালির অভিনয়ে একটি রহস্যময় হত্যাকাণ্ডের তদন্তের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
৪. 'মাই ফাদার’স শ্যাডো' (My Father’s Shadow)
আকিনোলা ডেভিস জুনিয়রের এই চলচ্চিত্রটি নাইজেরিয়ার দুটি ভাইয়ের গল্প, যারা তাদের বাবার সঙ্গে লেগোসে ভ্রমণ করে। এই যাত্রায় তারা তাদের বাবার অনুপস্থিতির কারণ বুঝতে পারে।
৫. 'অরওয়েল: ২+২=৫' (Orwell: 2+2=5)
রাউল পেকের এই ডকুমেন্টারিটি জর্জ অরওয়েলের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি আধুনিক সমাজে ফ্যাসিবাদের উত্থান এবং অরওয়েলের লেখার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেছে।
৬. 'নুভেল ভাগ' (Nouvelle Vague)
রিচার্ড লিংকলেটারের এই চলচ্চিত্রটি জ্যঁ-লুক গদারের 'ব্রেথলেস' চলচ্চিত্রের নির্মাণ প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি ফরাসি নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রতি একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৭. 'দ্য ফিনিশিয়ান স্কিম' (The Phoenician Scheme)
ওয়েস অ্যান্ডারসনের এই চলচ্চিত্রটি একটি কর্পোরেট গুপ্তচরবৃত্তি, স্ল্যাপস্টিক কমেডি এবং পিতা-কন্যার সম্পর্কের গল্প। বেনিসিও ডেল তোরো ও মিয়া থ্রিপলেটনের অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
৮. 'দ্য সিক্রেট এজেন্ট' (The Secret Agent)
ক্লেবার মেনডোনসা ফিলহোর এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭৭ সালের ব্রাজিলে সেট করা। ওয়াগনার মৌরার অভিনয়ে এটি একটি রাজনৈতিক থ্রিলার, যা পুরনো সিনেমা হলের স্মৃতিচারণাও করে।
৯. 'সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু' (Sentimental Value)
জোয়াকিম ট্রিয়ারের এই চলচ্চিত্রটি একটি পরিবারের গল্প, যেখানে একজন পরিচালক তার মেয়েকে তার নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়। রেনাতে রেইনসভে ও স্টেলান স্কারসগার্ডের অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে প্রাণবন্ত করেছে।
১০. 'সিরাত' (Sirat)
ওলিভার লাক্সের এই চলচ্চিত্রটি মরক্কোর মরুভূমিতে একটি বাবার তার নিখোঁজ মেয়েকে খোঁজার গল্প। সার্জি লোপেজের অভিনয়ে এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার।
১১. 'আ ইউজফুল ঘোস্ট' (A Useful Ghost)
রাচাপুম বুনবুনচাচকের এই থাই চলচ্চিত্রটি একটি ভৌতিক কমেডি, যেখানে একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে আটকে থাকা আত্মা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। দাভিকা হুর্নের অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে আরও মজাদার করেছে।
১২. 'ইয়েস' (YES)
নাদাভ লাপিদের এই চলচ্চিত্রটি একজন গীতিকার ও তার স্ত্রীর গল্প, যারা ইসরায়েলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণের চেষ্টা করে। এটি একটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র।
১৩. 'আডাম’স সেক' (Adam’s Sake)
লরা ওয়ানডেলের এই চলচ্চিত্রটি একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত নাটক, যেখানে একজন মা ও একজন ডাক্তার একটি শিশুর যত্ন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। লিয়া ড্রুকার ও আনামারিয়া ভার্তোলোমেইর অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে আরও গভীরতা দিয়েছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ প্রমাণ করেছে যে, সিনেমা শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজের আয়না, প্রতিবাদের ভাষা এবং মানবিক অনুভূতির প্রতিফলন। উপরোক্ত ১৩টি চলচ্চিত্র এই সত্যকে আরও সুস্পষ্ট করেছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/53c66sre
আফরোজা