ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

জাল সনদে চাকরি নেওয়া কলেজ প্রভাষকের অপসারণ দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ২৪ জুন ২০২৫

জাল সনদে চাকরি নেওয়া কলেজ প্রভাষকের অপসারণ দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে জাল সনদে চাকরি নেওয়া রাজশাহীর নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের এক প্রভাষকের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। মঙ্গলবার কলেজ ফটকের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় নাগরিকরা অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা অভিযুক্ত প্রভাষককে অবিলম্বে বরখাস্ত করে তদন্তপূর্বক স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান।

অভিযুক্ত প্রভাষকের নাম মো. আব্দুর রব। তিনি কলেজটিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং জেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, যে শিক্ষক নিজেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত, তাঁর কাছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষা কীভাবে পাব? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা তাঁর অপসারণ চাই।

একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই এমন গুরুতর অভিযোগ থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। তিনি আরও বলেন, যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি ও মাদকসহ একাধিক মামলার অভিযোগ রয়েছে, তাঁর কাছে আমাদের সন্তানেরা কী শিখবে? প্রতিষ্ঠান প্রধানও যদি তাকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

অভিযোগে বলা হয়, প্রভাষক আব্দুর রব ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমএ সনদ দিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত। তাঁর দাখিল করা আলিম পাসের সনদেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালে ১.৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও তিনি সনদ টেম্পারিং করে পাসের বছর ২০০৮ এবং জিপিএ ৩.৬৭ দেখান।

নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পর্বে সর্বনিম্ন নম্বর পেলেও তৎকালীন স্থানীয় সাংসদের সুপারিশে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ছাত্র বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আব্দুর রব গ্রেফতার হন। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কোনো কর্মচারী গ্রেফতার হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম। কিন্তু নওহাটা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান তা না করে উল্টো রবের জামিনের জন্য কলেজ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। এই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতেই রব প্রায় এক মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান।

রবের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় আরও পাঁচটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে। এর আগে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি দুইবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছিলেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক মো. আব্দুর রবের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান প্রভাষক আব্দুর রবকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আইন মোতাবেক তাকে কলেজ থেকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।”

সানজানা

×