
ছবিঃ সংগৃহীত
হার্নিয়া কি, কেন হয় এই সম্পর্কে আলোচনা করেছেন ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. রোকসানা আফরোজ।
তিনি বলেন, আমাদের দুই কুচকিতে দুর্বল দুইটি জায়গা আছে। বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে হয় কী যে, অন্ডকোষ পেটের ভিতরে তৈরি হয়। এটি কুচকিতে যে ইমিউনাল ক্যানেল আছে ওই প্রসেসে নিচে নেমে এসে অন্ডকোষের থলিতে নামে জন্মের সময়।
নরমালি নিয়ম হচ্ছে নামার পরে ওই জায়গাটি চেপে থাকার কথা বা বন্ধ থাকার কথা। কিন্ত কোন কারণে যদি ওইটা দুর্বল হয়ে যায় বা গ্যাপ থাকে এবং পেট থেকে বেরিয়ে আসে।
কেন হয় হার্নিয়া?
হার্নিয়া সাধারণত পেশির দুর্বলতা এবং অতিরিক্ত চাপের ফলে হয়। নিচে কিছু সাধারণ কারণ দেওয়া হলো:
১. জন্মগত পেশি দুর্বলতা: অনেক সময় শিশুরা জন্ম থেকেই দুর্বল পেশি নিয়ে জন্মায়।
২. ভারী জিনিস তোলা: অতিরিক্ত ওজন তোলা পেটের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে পায়খানা করার অভ্যাস হার্নিয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৪. অতিরিক্ত কাশি: দীর্ঘমেয়াদি কাশি থাকলে পেটের পেশির উপর চাপ পড়ে।
৫. মোটা হওয়া: শরীরের অতিরিক্ত ওজন পেশির উপর চাপ বাড়ায়।
৬. গর্ভাবস্থা: নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় পেটের চাপ বাড়লে হার্নিয়া হতে পারে।
হার্নিয়ার লক্ষণসমূহ:
হার্নিয়ার ধরন অনুযায়ী লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:
১. ফোলাভাব বা উঁচু অংশ: পেট, কুঁচকি বা নাভির আশেপাশে ফোলা দেখা যায়, যা দাঁড়ালে বা কাশি দিলে আরও স্পষ্ট হয়।
২. ব্যথা বা অস্বস্তি: ফোলা অংশে চাপ দিলে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে হেঁটে বা ভারী জিনিস তুললে।
৩. জ্বালা বা টান অনুভব: ফোলাভাবের আশেপাশে টান বা জ্বালাভাব।
৪. হজমের সমস্যা: বিশেষ করে হাইয়েটাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে বুক জ্বালা, বমিভাব, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
৫. পায়খানার সমস্যা: কোনো ক্ষেত্রে অন্ত্র চেপে গেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগে অসুবিধা হতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
১. ঔষধে চিকিৎসা: সাধারণত হার্নিয়ার মূল সমাধান ঔষধে সম্ভব নয়। তবে হাইয়েটাল হার্নিয়ার ক্ষেত্রে অ্যাসিড কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয় (যেমন: Antacids, Proton Pump Inhibitors)।
২. লাইফস্টাইল পরিবর্তন: ওজন কমানো। ভারী জিনিস তোলা এড়িয়ে চলা। কোষ্ঠকাঠিন্য বা কাশি নিয়ন্ত্রণ করা। নিয়মিত ব্যায়াম (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)
৩. সার্জারি (মূল চিকিৎসা পদ্ধতি):
i. Open Surgery: কাটার মাধ্যমে হার্নিয়া অংশ ঠিক করে জাল বা মেশ ব্যবহার করে পেশি মজবুত করা হয়।
ii. Laparoscopic Surgery (Keyhole Surgery): ছোট ছিদ্র করে ক্যামেরা ও সরঞ্জামের মাধ্যমে হার্নিয়া ঠিক করা হয়। এতে ব্যথা কম হয়, আরোগ্য তাড়াতাড়ি হয়, সেলাই ছোট।
জরুরি পরিস্থিতিতে (যেমন হার্নিয়া চেপে গিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে) তাৎক্ষণিক সার্জারি প্রয়োজন হয়।
রিফাত