ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অদম্য শিক্ষার্থী ডলার নিজের খরচ নিজেই চালান

সানজিদা জান্নাত পিংকি

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১ এপ্রিল ২০২৩

অদম্য শিক্ষার্থী ডলার নিজের খরচ নিজেই চালান

দরিদ্র বাবার ইচ্ছে ছেলে কৃষি কাজ করবে, অভাবের সংসারে জুটাবে দুমুঠো অন্ন

দরিদ্র বাবার ইচ্ছে ছেলে কৃষি কাজ করবে, অভাবের সংসারে জুটাবে দুমুঠো অন্ন। কিন্তু, অদম্য তরুণের স্বপ্নের কাছে তা যেন পাহাড়সম বড়। পরিবারের দুর্দশা কোনোভাবেই তার মানসিক শক্তির কাছে জিতে না। তাই, সকল হার না মানার লড়াইয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন নিজেকে গড়ার চ্যালেঞ্জ। বলছি, সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ডলারের কথা। সব বাস্তবতার ঊর্ধে গিয়ে যিনি শক্ত হাতে ধরেছেন নিজেকে গড়ার হাল।

ডলার যার নাম তার জীবনে যেন ডলারই বড় সংকট। ফেরী করে কাপড় বিক্রি করা বাবার ঘরে অভাবই তার বড় কারণ। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তুলনামূলকভাবে পড়াশোনায় একটু দুর্বল হওয়াতে কোনক্রমেই পরিবার তাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। কিন্তু, ইচ্ছেশক্তি দুর্বলতাকে সবলচিত্তে দাঁড় করিয়ে দেয়। তাই ঘর পালিয়ে চলে এসেছেন দূরে, ভর্তি হয়েছেন মধ্যবিত্তের ভরসার প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হয়েছেন ঠিকই কিন্তু, ১ম সেমিষ্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর বড় চিন্তা পড়ার খরচ জোগানো নিয়ে।

এ দ্বার-ও দ্বার সব ঘুরে অবশেষে ভরসা রাখলেন নিজের পায়ে। বেছে নিয়েছেন তিন চাকার বাহন রিক্সা। পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়েই ঘুরাচ্ছেন জীবনের চাকা। প্যাসেঞ্জার টেনে গড়ে যাচ্ছেন নিজের ভবিষ্যৎ। অন্য বন্ধুরা যখন আড্ডায় ব্যস্ত তখন ক্লাস শেষে রিক্সা চালিয়ে সেমিস্টার ফি তোলার জন্য শ্রম দেন এই শিক্ষার্থী। মোস্তাফিজের গ্রামের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আজমতপুরে। ৭ সদস্যের পরিবারে তার দুই ভাই-বোন কোনক্রমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারলেও মোস্তাফিজের উপয়ান্তর মিলে না।

পরিবারের চাপিয়ে দেওয়া কৃষিকাজের উপর অভিমান করে ঘর ছাড়েন ৪ বছর আগেই। শিক্ষিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছা তাকে বাধ্য করে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমাতে। উচ্চ  মাধ্যমিকের পড়ার খরচ রিক্সা চালিয়ে জোগাড় করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা অংকের খরচ তার দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। কোন কিছুতেই তিনি দমে যাননি। পড়াশোনা, বইকেনা, বাসাভাড়া দেয়া কষ্টসাধ্য হলেও দিন রাত পরিশ্রম করে রিক্সা চালিয়ে সে সব কিছুরই জোগান দিয়ে আসছেন।

শুরুটা গ্যারেজের রিক্সা ভাড়ায় নিয়ে হলেও ৪ বছরের জমানো টাকা দিয়ে নিজেই রিক্সা কিনেছেন। অদম্য এই তরুণ এখন তার উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ বাড়িতে থাকা তার মায়ের কাছেও প্রেরণ করেন। পড়াশোনায় এতবেশি আগ্রহ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার লেখা ও কবিতার মাধ্যমে সমাজে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই পরিবারের সহযোগীতা না পেয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। অবসর সময়ে নিজের জীবন এবং দারিদ্রতা নিয়ে কবিতা লিখেন তিনি।

×