ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বিতার্কিক মোহাইমেন

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২০ আগস্ট ২০২৩

বিতার্কিক মোহাইমেন

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মোহাইমেন

সেই ছোটবেলার কথা। বাড়িতে তখন সবেমাত্র রঙিন টেলিভিশন এসেছে। টিভিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখত বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি আর ভাবত সেও যদি পারত, এত সুন্দর করে বিতর্ক করতে! বিদ্যালয়ে পঠনরত অবস্থায়, এই সুপ্ত চাওয়াটুকু পূর্ণতা পেল। বন্ধ দরজার মতো খুলে গেল হিসেবে বিদ্যালয়ভিত্তিক একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বিদ্যালয়ে বিতার্কিক নির্বাচনের জন্য অডিশন দিল ছেলেটি, মনোনীতও হয়ে গেল। তৎকালীন সেই বিতর্কে দল হিসেবে দ্বিতীয় স্থান অধিকার এবং শ্রেষ্ঠ বিতার্কিকের খ্যাতি সঙ্গে নিয়ে বিতর্ক জীবনের পথচলা আরম্ভ মোহাইমেন হোসেনের।
বিতর্ক জীবনের যতটুকু যা প্রাপ্তি, তার পুরোটাজুড়েই ছিল নিরন্তর অধ্যবসায় আর নিরলস পরিশ্রম। সময়ে সময়ে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়েও, মনোবল ভাঙেনি মোহাইমেনের। শক্ত পায়ে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে সে। কখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কখনো বা নিজের ঘরে একা একাই বিতর্কের চর্চা চালিয়ে যেত মহাইমেন। তাই তো, মোহাইমেনের দৃঢ় এই প্রতিজ্ঞার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে সময়, ভাগ্য। বাংলাদেশ বেতার, দুর্নীতি দমন কমিশন, ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা কিংবা হোক সেটি স্কুলে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলা, স্কুলপর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে, উল্লিখিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত বিতর্কের প্রতিযোগিতায়, বিদ্যালয়ের হয়ে বিতর্ক দলে অংশ নিয়েছে মোহাইমেন। বিদ্যালয়কে বারংবার চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্জন করে এনে দিয়েছে এই বিতার্কিক! স্কুল-কলেজের গ-ি পেরিয়ে, মোহাইমেনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ছাত্র হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মোহাইমেনের বিতার্কিক হিসেবে পথ চলা আরম্ভ হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সংঘে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষেই নিজের অনুষদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে মোহাইমেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বছরেই বিজয়ী হওয়ার এই খেতাব পশুপালন অনুষদের আঙিনায় এনে দেওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে মোহাইমেন। ‘নিজের ফ্যাকাল্টিকে নিজের কৃতিত্বের উপহার বারবার তুলে দিতে পারাটা অনেক আনন্দের’- এমনটাই মন্তব্য করেছে মোহাইমেন।
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা ১ কিংবা ২ এর ভেতরেই থেকেছেন মোহাইমেন ও তার দল। শুধু তাই নয়, বিটিভিতে বিতর্ক দেখা এই ছেলেটি আজ নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করছে, বিটিভি কর্তৃক আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলোতেও।
মোহাইমেন বলেন, ‘ছোটবেলায় বিটিভিতে বিতর্ক দেখে কাটিয়ে দেওয়া সেই আমিকে যখন বিটিভির পর্দায় দেখি তখন আত্মতৃপ্তির একটি ধারা নিজের ভেতরে অনুভব করতে পারি। যদি বলি, বিতর্ক আমাকে কি দিয়েছে?

আমি বলব, ব্যস্ততাময় এই জীবনে, বিতর্কের মঞ্চে কখনো অর্থনীতি, কখনো দর্শন কিংবা কখনো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করতে পারা, আলোচনা-সমালোচনা করতে পারা, বিতর্কের মাধ্যমে নানামুখী সমস্যার সমাধান করা, এসব কিছু আমাকে মানসিক আর আত্মিক শান্তি দিয়েছে। বিতর্ক আমাকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে চিন্তা করতে শিখিয়েছে, আমাকে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝতে শিখিয়েছে, আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছে।

×