ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

চারমাসে ইউরোপে ৮০৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ২৪ জুন ২০২৫

চারমাসে ইউরোপে ৮০৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি

চারমাসে ইউরোপে ৮০৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি

চলতি বছরের প্রথম চারমাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উনত্রিশটি দেশে ৮০৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত থাকলে চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ জন্য বাংলাদেশের পোশাকের ডিজাইন ও মানে আর বৈচিত্র্যতা আনতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের সঠিক বা প্রকৃত মূল্য নিরূপণ হওয়া  জরুরি। উদ্যোক্তারা পোশাকের ন্যায্যদাম পেলে আরও ভালোমানের পোশাক তৈরি ও রপ্তানি করতে পারবেন। 
তথ্যমতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে চীন। তবে এবারে পোশাক রপ্তানিতে দেশটির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি চীনের চেয়ে মাত্র ৩২ কোটি ডলার কম হয়েছে। ইইউর পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (ইউরোস্ট্যাট) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম চার মাস জানুয়ারি-এপ্রিলে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানিগুলো। এ আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।

আলোচ্য চার মাসে ইইউর বাজারে চীন ৮৩৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে ইইউর বাজারে বাংলাদেশ ৮০৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেশ পিছিয়ে ছিল। যদিও গত বছর চীনের চেয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল। ২০২৩ সালে ইইউর বাজারে চীন ২ হাজার ৫৪১ কোটি ডলার ও বাংলাদেশ ১ হাজার ৮৮৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। পরের বছর (২০২৪) চীনের রপ্তানি ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬০৭ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৭৮ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অর্থের হিসাবে পিছিয়ে থাকলেও পরিমাণে চীনকে টপকে যায় বাংলাদেশ, ২০২২ সালে। সেবার বাজারটিতে বাংলাদেশ ১৩৩ কোটি ও চীন ১৩১ কোটি কেজি কাপড়ের সমপরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গত বছর চীনের চেয়ে ২ কোটি কেজির সমপরিমাণ তৈরি পোশাক কম রপ্তানি করে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ চীনকে ছাড়িয়ে গেছে।

এ সময়ে বাংলাদেশ ৪৮ কোটি ও চীন ৩৮ কোটি কেজি কাপড়ের সমপরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির আর্থিক মূল্যে শেষ পর্যন্ত চীনকে টপকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছাতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি বজায় থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চীনকে টপকে যেতে পারে বাংলাদেশ। ইইউর বাজারে চীন ও বাংলাদেশের পর শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মরক্কো, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া।

এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে তুরস্ক ৩১০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে। এ বাজারে গত বছর তুরস্ক ১ হাজার ৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ইইউর বাজারে ভারত ২০১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২০ শতাংশ বেশি। একই সময়ে কম্বোডিয়া ১৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।

উল্লেখ্য, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বরাবরই শীর্ষস্থানে রয়েছে তৈরি পোশাকখাত। কমপ্লায়েন্স রক্ষায় প্রতিবছর দেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে পোশাকের আমদানিকারকরাও নতুন করে বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে দেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। এরপর একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়। গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।

×