
খাদ্যদ্রব্যের নিম্নদরের সুবাদে দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে
খাদ্যদ্রব্যের নিম্নদরের সুবাদে দেশে মূল্যস্ফীতি কমছে। টানা ছয় মাস নি¤œমুখী রয়েছে মূল্যস্ফীতি। চলতি বছরের মে মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমে এসেছে। গত ছয় মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ধাপে ধাপে কমছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক (জুন-২০২৫)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে এ চিত্র। বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্যদ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগের সুফল দেখা যাচ্ছে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হারে।
খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকায় সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনো চাল ও মাছের দামে উচ্চমূল্যের চাপ রয়ে গেছে। রেমিটেন্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা দেশের বাহ্যিক খাতকে শক্তিশালী করেছে, যদিও এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
মে মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে খাদ্যপণ্যের অবদান ছিল ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী মাসে ছিল ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। অপরদিকে, আবাসন খাতে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, তৈরি পোশাক ও পাদুকা খাতে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পরিবহন খাতে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অবদান রয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে চালের দাম মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে (৪০ শতাংশ), এরপর রয়েছে মাছ (২৮ শতাংশ), ফলমূল (১১.৯৩ শতাংশ) এবং তেল (৮.৭ শতাংশ)।
বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসার কারণে চালের দামে কিছুটা স্বস্তি আসার ইঙ্গিত মিললেও, দাম পুরোপুরি কমতে এখনো সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। পণ্যভিত্তিক মূল্যস্ফীতির বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাঝারি চালের দাম মে মাসে আগের তুলনায় আরও বেড়ে ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ হয়েছে।
এ ছাড়া মোটা চাল, ইলিশ, বেগুন, সয়াবিন তেল, আম, পাঙ্গাশ মাছ, চিকন চাল, লাউ ও মিষ্টিকুমড়া- সবই সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। অপরদিকে, আলু ও মুরগির মাংসের দাম কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মে মাসে আলুর দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মুরগির মাংসের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট মূলত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এটি দেশের জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশের সমান। বিদায়ী বছরের মূল বাজেটের তুলনায় এতে বরাদ্দ ০.৮৮ শতাংশ কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৬.১৮ শতাংশ বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে, যা ছিল বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে খাদ্যদ্রব্যের দাম কিছুটা কমতে শুরু করে, যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতিতে।