ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উদ্যোগ চীনা কোম্পানির, প্রতিবছর রপ্তানি হবে ৫ হাজার টন

ট্যানারির বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন তৈরি হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:২৮, ১০ জুন ২০২৫

ট্যানারির বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন তৈরি হবে

চামড়া শিল্পের বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন তৈরি করবে চীনা কোম্পানি

চামড়া শিল্পের বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন তৈরি করবে চীনা কোম্পানি। উৎপাদিত জেলাটিন ও শিল্প  প্রোটিন রপ্তানি হবে চীন ও রাশিয়ায়। চামড়ার বর্র্জ্য থেকে ৫ হাজার টন জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া থেকে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পাওয়া গেছে। এর পুরোটাই কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায় চীনা কোম্পানি। 
পশু চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পর সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ফেলে দেওয়া হয় ট্যানারি বর্জ্য। এই বিপুল পরিমাণ উচ্ছিষ্ট কঠিন বর্জ্য রি-সাইকেল করে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে চীনা কোম্পানি। বাংলাদেশ জেডব্লিউ অ্যানিমেল প্রোটিন কোং লি. নামে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সাভারে কারখানা স্থাপন করে জেলাটিন উৎপাদন করছে। এবার তারা ট্যানারি বর্জ্য থেকে জেলাটিনের পাশাপাশি শিল্প প্রোটিন পাউডারও উৎপাদন করবে। কোম্পানিটি চীনের ওয়েনঝু ইউয়ানফেই ও পিয়ংইয়াং-এর মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিল্প-প্রোটিন পাউডার চামড়া নরম করতে ব্যবহৃত হয়। আর জেলাটিন ব্যবহৃত হয় ওষুধের ক্যাপসুলের আবরণ তৈরি করতে, যা বর্তমানে স্থানীয় শিল্পগুলো আমদানি করে। 
কোম্পানিটির ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার টন জেলাটিন ও শিল্প-প্রোটিন পাউডার চীন ও রাশিয়ায় রপ্তানি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চীনা কোম্পানিটি বাংলাদেশে চামড়ার বর্জ্য থেকে এই দুটি উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনকারী প্রথম এবং একমাত্র বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান। বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যৌথভাবে কাজ করার জন্য সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম শাহনেওয়াজ বলেন, জেডব্লিউ অ্যানিমেল প্রোটিন চামড়া শিল্পনগরী থেকে ক্রমান্বয়ে সব ক্রোম শেভিং ডাস্ট নিয়ে যাবে।

চামড়া থেকে পাওয়া বিপুল পরিমাণ উচ্ছিষ্ট কঠিন বর্জ্য রি-সাইকেল করে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য তৈরি করা হবে। বাংলাদেশ  জেডব্লিউ অ্যানিমেল প্রোটিন কোং লি. নামে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সাভারে কারখানা স্থাপন করে জেলাটিন উৎপাদন করছে। এবার তারা ট্যানারি বর্জ্য থেকে জেলাটিনের পাশাপাশি শিল্প প্রোটিন পাউডারও উৎপাদন করবে। তিনি আরও বলেন, এ উদ্যোগ ট্যানারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের একটি বড় অর্জন। আগে এই ক্রোম-শেভিং ডাস্ট অবৈধভাবে পোল্ট্রি বা মাছের খাবারে ব্যবহৃত হতো-ফলে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করত।

কোম্পানিটির ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার টন জেলাটিন ও শিল্প-প্রোটিন পাউডার চীন ও রাশিয়ায় রপ্তানি করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, কারখানাটি কাঁচা চামড়ার টুকরা  থেকে জেলাটিন বের করে তা থেকে ক্যাপসুলের খোলস তৈরি করছে। ভবিষ্যতে তারা ক্রোম শেভিং ডাস্ট থেকে  ক্রোম আলাদা করে প্রোটিন পাউডার তৈরি করবে। ইতোমধ্যে তারা বাংালাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অনুমতিও পেয়েছে। 
জানা গেছে, প্রতিবছর সাভার চামড়াশিল্প নগরীতে প্রায় ৮-৯ হাজার টন ক্রোম-শেভিং ডাস্ট উৎপন্ন হয়। ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো সরানো হলেও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চ্যালেঞ্জ রয়ে  গেছে। তরল বর্জ্য সিইটিপির মাধ্যমে ধলেশ্বরী নদীতে নিষ্কাশন করা হলেও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো পদক্ষেপ ছিল না। ফলে শিল্প পার্ক এলাকার মধ্যে নদীর তীরে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হয়, যা নদী ও পানি দূষণ করে। শুধু তা-ই নয়, এলডব্লিউজি সনদ পেতেও বড় বাধা হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেওয়া বর্জ্য। কারণ এলডব্লিউজি সনদ পেতে মোট ১,৭১০ মার্কিংয়ের মধ্যে ১৫০ মার্কস এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ। ফলে অন্যান্য মার্কস অর্জন সম্ভব হলেও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মার্কস অর্জন করতে পারেনি দেশের ট্যানারিগুলো।

শাহনেওয়াজ আরও বলেন, বর্জ্য থেকে পণ্য উৎপাদনের জন্য একটি অংশ জেডব্লিউ অ্যানিমেল প্রোটিন নিয়ে  গেলে আর অবশিষ্ট অংশের জন্য যদি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়, তালে দীর্ঘদিন পর হলেও এই বর্জ্যরে একটা সমাধান হবে। এটি কমপ্লায়েন্স অর্জনে একটি বড় সফলতা হবে। জেডব্লিউ অ্যানিমেল প্রোটিনের কর্মকর্তা পারভেজ খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য চামড়ার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদন। কাঁচা চামড়ার ওয়েট ব্লু- স্ক্র্যাপ ও ক্রোম-শেভিং ডাস্ট থেকে জেলাটিন ও প্রোটিনের গুঁড়া তৈরি করা হবে।

×