ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চুয়াডাঙ্গায় চামড়ার মূল্য কম তবুও আশাবাদী মাদরাসাগুলো, চামড়া সংরক্ষণের মাধ্যমে ন্যায্য দামের অপেক্ষা

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা। 

প্রকাশিত: ১৭:৪৯, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৫০, ১২ জুন ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় চামড়ার মূল্য কম তবুও আশাবাদী মাদরাসাগুলো, চামড়া সংরক্ষণের মাধ্যমে ন্যায্য দামের অপেক্ষা

এবার কোরবানির ঈদে চুয়াডাঙ্গায় গরু ও ছাগলের কাঁচা চামড়ার দাম আশানুরূপ হয়নি। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছাগলের চামড়া ৫০ টাকা এবং গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনেছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। বাজারে মূল্য না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় এবার চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৯টি মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং নিজেদের সংগ্রহ করা চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি সহায়তায় পাওয়া লবণের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করছে।

কর্তৃপক্ষরা বলেছেন, বাজার স্থিতিশীল হলে ১৫-২০ দিন বা তারও পরে চামড়া বিক্রি করবেন তারা। এতে তারা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি কিছুটা লাভবান হবেন বলেই আশা করছেন। প্রতি বছর কোরবানির পশুর চামড়া এসব ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে দান করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। ব্যবসায়ীরা পরে সেই চামড়া কিনে থাকেন। কিন্তু চামড়া পচনশীল হওয়ায় আগে বিক্রির জন্য চাপ থাকত মাদ্রাসাগুলোর ওপর। ফলে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হতো। এবার সে চিত্র কিছুটা ভিন্ন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় জেলার ১৯টি মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং চামড়া সংরক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ৩৬ হাজার ৩০০ কেজি লবণ সরবরাহ করে জেলা প্রশাসন। এর মাধ্যমে তারা ৮২৪টি গরুর চামড়া এবং ৫ হাজার ২৪৮টি ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করেছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার বুজরুকগড়গড়ি গ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিন মুফতি আজিজুল্লাহ বলেন, এবারই প্রথম আমরা চামড়া সংরক্ষণ করেছি। সরকারের দেয়া লবণেই আমরা কাজ চালিয়েছি, আলাদা কোনো খরচ হয়নি। আশা করছি, কিছুদিন পর ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো। এতে কিছু লাভ হলে সেটাই আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। তিনি জানান, এবার তারা ১৫০টি গরু ও ৭০০টি ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দশমাইল গ্রামের বদরগঞ্জ হাফিজিয়া মাদরাসার অভিভাবক সদস্য রিমন মণ্ডল বলেন, বাজারে চামড়ার দর খুবই কম। এখন বিক্রি করলে যে দামে নিতে চাইছিল, তা খুবই হতাশাজনক। তাই সংরক্ষণ করেছি। আশা করছি, পরে ভালো দাম পাবো। তাদের মাদরাসা এবছর ১০টি গরু ও ৩৭টি ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করেছে।

বিসিক জেলা কার্যালয় চুয়াডাঙ্গার উপ-ব্যবস্থাপক এবিএম আনিসুজ্জামান বলেন, ১ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে সম্মত হন। সরকার তাদের মধ্যে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ করেছে। চামড়া সংরক্ষণের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সরকারিভাবে সহায়তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রতিষ্ঠান এভাবে চামড়া সংরক্ষণে আগ্রহী হবে, যা একদিকে মাদরাসাগুলোর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতায় সহায়ক হবে, অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করবে।

রিফাত

×