
লাইসেন্স না নিয়ে তারকা মানের হোটেল ঘোষণা
লাইসেন্স না নিয়ে তারকা মানের হোটেল ঘোষণা করে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর অভিজাত এলাকার হোটেলগুলো। চলছে রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব, অন্যদিকে যারা এ খাতের সৎ উদ্যোক্তা তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় যারা লাইসেন্স না নিয়েই তারকা মানের হোটেলের সেবা দিয়ে যাচ্ছে তাদের কর ও ভ্যাটের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বা ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় ৫, ৪ ও ৩ তারকা হোটেলের জন্য ‘আদর্শ কর তফসিল ২০১৫’ অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে নগর কর আদায়ের বিধান রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবচিত্র হলো, বহু হোটেল অতিথিদের তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা দিলেও, সরকারি পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে তারকা লাইসেন্স নিচ্ছেন না। ফলে তারা এই কর ফাঁকি দিতে পারছেন। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ঢাকা শহরে বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে ৯টি, ৪ তারকা ১টি, এবং ৩ তারকা ১০টি। অথচ বাস্তবে ডিএনসিসি এলাকায় তারকা সুবিধ দিচ্ছে এমন ৪০ থেকে ৫০টি হোটেল রয়েছে যাদের কোনো তারকা লাইসেন্সই নেই।
কর ফাঁকির অভিনব পন্থা ॥ লাইসেন্সবিহীন তারকা হোটেলের মালিকরা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেল ব্যবস্থাপক জানান, বেশিরভাগ হোটেল তিন বা চার তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, অথচ মাত্র ১ বা ২ তারকার লাইসেন্স নিচ্ছে-এভাবেই কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। হোটেল ও রেস্তরাঁ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী ৪১টি মানদ- পূরণ করলেই তারকা শ্রেণিবিন্যাস প্রাপ্ত হয়। কিন্তু সেই মানদ- পূরণ করেও অনেক হোটেল লাইসেন্স নিচ্ছে না, যেন কর ফাঁকি দেওয়া সহজ হয়। তবে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, কর ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
যেসব তারকা মানের হোটেল লাইসেন্স না নিয়ে কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে তাদের ধরা হবে। সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান ভ্যাট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জানান, কর ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হবে না। সরকারের আয় বাড়াতে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। এ কারণে যারা এখনো কর ও ভ্যাটের বাইরে রয়েছেন দ্রুত তাদের করনেটে নিয়ে আসা হবে।
এদিকে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি তারকা হোটেলের একজন ম্যানেজার বলেন, আমরা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে নগর কর দিচ্ছি, অথচ আমাদের পাশের হোটেল একই রকম সুবিধা দিয়েও কোনো কর দিচ্ছে না। ফলে তারা রুম ভাড়া কম রাখতে পারছে। আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিহা) সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসিন হক হিমেল বলেন, লাইসেন্সবিহীন তারকা হোটেলের মালিকদের দৌরাত্ম্যের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছে না। এতে করে বৈষম্য বাড়ছে। এ অবস্থার অবসানে এ খাতের সকল উদ্যোক্তাদের করের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকা প্রয়োজন।
অভিযোগ উঠেছে, গোল্ডেন টিউলিপ দ্য গ্র্যান্ডমার্ক বনানী, লেকশোর গ্র্যান্ড গুলশান, লেকশোর স্যুটস বনানী, লেকশোর হেইট গুলশান, দি মিডোরি বাই লেকশোর অ্যাসকট দ্য রেসিডেন্স বারিধারা, হোটেল লা ভিঞ্চি কাওরানবাজার, হোটেল ইউনিক রিজেন্সি বনানী, পার্ল হোটেল বনানী, রেইনট্রি বনানী, কোভেন্টিনা লেক স্যুটস্ ও ন্যাসেন্ট গার্ডেনিয়া রেসিডেন্সের মতো আরও অনেক তারকা হোটেলগুলোর লাইসেন্স নেই। পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে দেশের হোটেল শিল্পে সুশাসন ও ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা লাগবে। এই অনিয়ম রোধে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ও রাজস্ব কর্তৃপক্ষের যৌথভাবে অভিযান চালানো উচিত। পাশাপাশি তারকা লাইসেন্স ছাড়া কোনো হোটেল তিন বা চার তারকা সুবিধা প্রচার করতে পারবে না-এমন নিয়ম চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।