ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

বিকাশ

আর্থিক লেনদেনে সাফল্য

জলি রহমান

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ৩ মে ২০২৫

আর্থিক লেনদেনে সাফল্য

বিকাশ মোবাইল ফোনভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে আস্থা অর্জন করেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরও। বিগত তিন বছর ধরে বিকাশের মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। এরপর ২০২২ সালে ১৮ কোটি এবং ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে বিকাশ। তবে ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বা আয় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে তা কমে যায়। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর বিকাশ লোকসানে ছিল। গত বছর শেষে মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটে। বিকাশ দেশের মোবাইল ব্যাংকিং খাতের অগ্রগামী ও অন্যতম সফল উদাহরণ। বিকাশের প্রতিষ্ঠাকাল ২০১০ সালে হলেও ২০১১ সালে বিকাশ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সেবা চালু করে। শুরুর দিকে তাদের মূল সেবা ছিল মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো ও উত্তোলন। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা কামাল কাদীর। এর সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত। বিকাশ শুরু থেকেই নানা ধরনের জনহিতকর সেবা দিয়ে আসছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিল পরিশোধ, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল রেমিটেন্স ইত্যাদি। বিকাশের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে সহজ, নিরাপদ ও সুলভ আর্থিক সেবা প্রদান করা। আমেরিকান উদ্যোক্তা কামাল কাদীর ও ইকবাল কাদীর একইসঙ্গে এটি শুরু করেন। বিকাশ বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ এটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও ব্যবহার করা যায় এবং মোবাইলের মাধ্যমে খুব সহজেই লেনদেন সম্ভব।
তথ্যানুযায়ী, মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা বা এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের জন্য ২০২৪ সালটি ছিল রেকর্ডের বছর। গত বছর শেষে বিকাশের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকায়। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের আয় ৮৬৭ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির প্রথমবারের মতো ৩১৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা বা ২১৯ শতাংশ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিকাশ এত মুনাফা ও আয় করেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে বিকাশের রেকর্ড আয় ও মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে। বিকাশের এই মুনাফার ওপর ভর করে ব্র্যাক ব্যাংকও সমন্বিতভাবে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। কারণ বিকাশের সিংহভাগ মালিকানা ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে রয়েছে।
এদিকে বিকাশের গত ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির আয় বা ব্যবসা বেড়ে হয়েছে ৯ গুণ। আর একই সময়ের ব্যবধানে মুনাফা বেড়ে হয়েছে ১৭ গুণ। ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। আর ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। দুটোই এখন বেড়ে বিকাশকে বড় অঙ্কের লাভজনক এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১৮৯ কোটি টাকা সরকারকে কর দিয়েছে। আর ওই বছর ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা।
বিকাশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বা সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিকাশ সব সময় ব্যবসা টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে। ক্যাশলেস দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে বিকাশ এক দশক ধরে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিষেবা অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও গ্রাহকসহ অংশীজনদের ডিজিটাল শিক্ষা বাড়াতে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করেছে। এই কৌশলগত উদ্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে স্থিতিশীলতা এনেছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথকে করেছে সুগম।
প্রায় দেড় দশক আগে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিকাশের এখন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট ও সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। আর্থিক লেনদেন ছাড়াও বিকাশে রয়েছে ইন্টারনেট বিল, গ্যাস বিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফিসহ বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, ন্যানো ঋণ ও ডিপোজিট সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি ইন মোশন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন বা আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ও সফটব্যাংক। সম্প্রতি চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন শ্রেণিতে চার প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল বিকাশও। পুরস্কার বা সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশী বিনিয়োগ শ্রেণিতে এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল খাতে বিকাশ এনেছে বিপ্লব। গ্রামীণ অর্থনীতিকে ডিজিটালাইজ করতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

প্যানেল

×