
ছবিঃ সংগৃহীত
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের এই ছোট্ট দ্বীপটি ‘নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড’ নামে পরিচিত। এটি একটি নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক দ্বীপ যেখানে বসবাস করে একটি আদিম উপজাতি, যাদের বলা হয় সেন্টিনেলিজ। এই উপজাতির সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনও যোগাযোগ নেই এবং তারা আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটির আয়তন মাত্র ৭২ বর্গকিলোমিটার। সেন্টিনেলিজদের সঠিক জনসংখ্যা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় প্রায় ৪০০ জনের মতো লোক এখানে বসবাস করে। তারা একে অপরের সঙ্গে এমন এক ভাষায় কথা বলে যা অন্য কেউ বুঝতে পারে না। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এরা আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার বছর আগে এই দ্বীপে এসেছিলেন।
ভারত সরকার এই দ্বীপের সার্বভৌমত্বের মালিক হলেও, দ্বীপে প্রবেশ এবং সেখানকার উপজাতির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, সেন্টিনেলিজরা বাইরের মানুষকে সহ্য করে না এবং আগ্রাসী প্রকৃতির। তারা তীর এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে যে কোনও অনুপ্রবেশকারীর ওপর আক্রমণ করে থাকে।
১৯৬৭ সাল থেকে ভারত সরকার যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে। ১৯৯১ সালে নৃতত্ত্ববিদ ত্রিলোকনাথ পণ্ডিত প্রথম সেন্টিনেলিজদের সঙ্গে সীমিত বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। তবে পরে সেন্টিনেলিজরা পুনরায় নিজেদের স্বাধীন জীবন যাপনে ফিরে যায় এবং আধুনিক মানুষের যেকোনো প্রবেশকে বাধা দেয়।
২০০৪ সালের সুনামির পর ভারত সরকার হেলিকপ্টারে ত্রাণ পাঠালে সেটিও তারা প্রত্যাখ্যান করে এবং ত্রাণ পাঠানো বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। এছাড়া ২০০৬ ও ২০১৮ সালে অনুপ্রবেশকারীদের ওপর তাদের তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে।
সেন্টিনেলিজরা আগুন ব্যবহার বা চাষাবাদ জানে না, তারা গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে বস্ত্র তৈরি করে এবং শিকার ও ফলমূল খেয়ে জীবনযাপন করে। তারা মৃত ব্যক্তিদের প্রথমে কবর দেয়, পরবর্তীতে মৃতদেহ তুলে সমুদ্রের কাছে ঝুলিয়ে রাখে যাতে অন্য কেউ তাদের এলাকায় প্রবেশ না করে।
ভারত সরকার বর্তমানে এই দ্বীপে পর্যটন ও যেকোনো যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। বর্তমানে সেন্টিনেলিজরা তাদের আদিম জীবনযাত্রায় স্বাধীনভাবে বসবাস করছে এবং দ্বীপটি ‘নিষিদ্ধ দ্বীপ’ হিসেবে পরিচিত।
মারিয়া