
ঠাকুরগাঁও শহরের ব্যস্ত রাস্তায় যখন আধুনিক স্পোর্টস বাইকগুলোর হুঙ্কার শোনা যায়, তখন এক কোণে বিনয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকে একটি ছোট্ট পুরনো মোটরসাইকেল হোন্ডা ৫০ সিসি।
চেহারায় বয়সের ছাপ, তবুও যেন ইঞ্জিনে জমে আছে ইতিহাস। আজকাল যেখানে যন্ত্রপণ্য বদলাতে সময় লাগে না, সেখানে এই বাইকটি দাঁড়িয়ে আছে সময়কে জয় করে, ঠিক যেন এক চলন্ত ঐতিহ্য।
এই বাইকটির মালিক ঠাকুরগাঁও সদরের রাজাগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মঈনুল হোসেন। বয়স যতই বাড়ুক, বাইকটির প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। সদরের বরদেশ্বরী বাজারের একটি চায়ের টেবিলে বসে তিনি বলেন, “এই বাইকটা আমার জীবনের অনেক পথের সাথী। এটা শুধুই একটি বাহন নয়, এটা আমার জীবনের সোনালী দিনগুলোর স্মৃতি।”
১৯৮০-এর দশকে জাপানে তৈরি হোন্ডা ৫০ সিসি, যেটি কিনেছিলেন তিনি অনেক সাধনার পর। সেই থেকে আজ অবধি, এটি একাধিকবার রাস্তায় নেমেছে, ঝড়-বৃষ্টি পেরিয়েছে, কিন্তু থামেনি।
আজও মাঝেমধ্যে স্টার্ট দিয়ে চালানো হয়, “ঠিক যেন পুরোনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে একটু দেখা করা,” বললেন মঈনুল।
বাইকটি এখনো সচল। হর্ণ, লাইট, টায়ার সবকিছুই অরিজিনাল অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি পার্টস এখনো অরিজিনাল। প্রতি লিটারে চলে প্রায় ৭০ কিলোমিটার, যেখানে আধুনিক বাইকগুলো সেই দিক দিয়ে অনেক পেছনে পড়ে যায়।
অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাইকটি কেনার, কেউ দাম শুনে অবাক, কেউ আবার আবেগে আলোড়িত।
তবে মালিক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন “এটা বিক্রির জন্য নয়। এটা আমার জীবনের অংশ।”
যন্ত্র হলেও, এই বাইকটির সাথে মঈনুলের সম্পর্ক যেন আত্মার।
শুধু তাঁর একার নয়, বাইকটি এক সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে একটি সময় যখন মোবাইল ছিল না, GPS ছিল না, তবুও মানুষ পৌঁছে যেত প্রিয়জনের কাছে, ঠিক এই বাইকে চড়ে।
স্থানীয় তরুণ বাইকপ্রেমী অংকন বলেন, “আজকাল সব কিছুই বদলায়, আধুনিক হয়। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস আছে, যা পুরোনো হলেও হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। এই বাইকটা তারই উদাহরণ।”
তিনি আরো বলেন, এই বাইকটিকে ঘিরে শুধু প্রযুক্তির নয়, সম্পর্ক, ভ্রমণ, ভালোবাসা ও আত্মিক বন্ধনের গল্প গাঁথা। এটি শুধু মঈনুলের নয়, ঠাকুরগাঁও শহরেরও স্মৃতি। একটা সময়, একটা জীবন, একটা মানুষ সব মিলেই যেন এই ৫০ সিসির বাইকে লুকিয়ে আছে এক সম্পূর্ণ অধ্যায়।
যান্ত্রিকতায় ভরা আধুনিক জীবনে যখন সব কিছু বদলায়, তখন এই ছোট্ট বাইকটি মনে করিয়ে দেয় ভালোবাসা আর যত্ন থাকলে, সময়কে হারানো যায়। হোন্ডা ৫০ সিসি কেবল একটি বাইক নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস।
Jahan