
পবিত্র ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি পেয়েও রাজধানীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থী এবার বাড়ি ফেরেননি। পারিবারিক নানা জটিলতা, দূরত্বজনিত সমস্যা কিংবা আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই রয়ে গেছেন ঢাকা শহরে নিজ নিজ হোস্টেল, মেস কিংবা বিদ্যালয়ের আবাসিক হলে।
সোমবার (৯ জুন) রাজধানীর উত্তরা কয়েকটি এলাকার মেস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে ঘুরে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তাদের সাদামাটা ঈদ উদযাপনের চিত্র তুলে ধরেন তারা।
তারা জানান, বিভিন্ন কারণে ঈদে বাড়ি ফেরা হয়নি। পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেননি তারা। কেউ পড়াশোনা টিকিয়ে রাখতে; কেউ চাকরি হারানোর ভয়ে; কেউবা বেকারত্বকে লুকিয়ে রাখার জন্য বিসর্জন দিয়েছে ঈদ আনন্দ।
ঈদে বাড়ি না ফিরে মেসে থাকছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র রিফাত জামান প্রতীক। তিনি বলেন, কম টাকা দিয়ে যে খাব এমন রেস্তোরাঁগুলো এখনও খোলেনি। ঈদের আগে অল্প কিছু বাজার করেছিলাম তা রান্না করে আমাদের কয়েকজন বন্ধুর খাওয়া-দাওয়া চলছে।
ইমরান খান নামের এক শিক্ষার্থী। পড়াশোনা শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এখন চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি ঢাকার তুরাগে একটি মেসে দুইজন বন্ধু মিলে থাকেন। ঈদে বাড়ি না যাওয়ার কারণ হলো, তিনি পরিবারের কাছে নিজের বেকারত্বটা লুকিয়ে রাখতে চান। তিনি বলেন, ঈদের পর আমার ৪টি চাকরির পরীক্ষা রয়েছে। মূলত এ কারণে ঈদে বাড়ি যায়নি। পড়াশোনা শেষ হয়ে গিয়েছে বাড়ি গেলেই আত্মীয়স্বজনরা জানতে চায় চাকরি হয়েছে কিনা। এমন কথাগুলো থেকে নিজেকে বাঁচাতেই মূলত বাড়ি ফেরা হয়নি এবার ঈদে।
ঈদে খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না সমস্যা হয়নি। নিজেরা রান্না করতে পারি। এছাড়া এ এলাকায় কিছু স্থানীয় বন্ধু রয়েছে যারা পরিবার নিয়ে এখানে বসবাস করেন তারা দাওয়াত দিয়েছিলো; সেখানে ঈদের দিন কাটিয়েছি।
ধানমন্ডি নিউ ডিগ্রি মডেল কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করেন আরিফুল ইসলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন, নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, পরিবার ছাড়া কি ঈদ ভালো কাটে ভাই? যদি ঈদে বাড়ি যেতাম তাহলে তো চাকরিটা থাকতো না; আর চাকরি না থাকলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত। এসব কারণে বাড়ি যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, বাড়ি রাজশাহীতে হলেও টিকিট পাইনি। তাছাড়া খরচও বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই বন্ধুদের সঙ্গেই ঈদ করছি এলাকায়। এক ধরনের পরিবারই গড়ে উঠেছে আমাদের মাঝে।
এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, ঢাকায় থাকা এই শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত স্বেচ্ছাসেবী ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক কিংবা সামাজিক আয়োজনে তাদের যুক্ত করা, যাতে তারা একাকিত্বে না ভোগে।
এমন চিত্র যে শুধু রাজধানীর তা নয়। সারাদেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে এমন হাজারো শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর রয়েছেন। যারা পারিবারিক, আর্থিক, বেকারত্ব প্রভৃতি কারণে ঈদ আনন্দকে বিসর্জন দিয়েছে। ছুটি থাকলেও ঘরে ফেরা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে বন্ধুত্ব আর সাহচর্যই হয়ে উঠছে শহরে থেকে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের ঈদের প্রধান ভরসা।
রাজু