ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে চার শতাব্দীর প্রাচীন ঈদগাহ মসজিদ

প্রদীপ রায় জিতু, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বীরগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬:১১, ২৮ মে ২০২৫

সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে চার শতাব্দীর প্রাচীন ঈদগাহ মসজিদ

ছবি : জনকণ্ঠ

চার শতাব্দীর সাক্ষী দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের ভাবকি গ্রামে দাঁড়িয়ে থাকা ৪২১ বছরের প্রাচীন ঈদগাহ মসজিদটি আজ সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ১৬০৪ সালে নির্মিত এই মসজিদটি একসময় নিয়মিত নামাজ আদায়ের স্থান ছিল, তবে বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হয় কেবল দুই ঈদের জামাতের জন্য। ইতিহাস, ধর্মীয় অনুভূতি এবং স্থাপত্যশৈলীর এই প্রাচীন নিদর্শনটি আজ অবহেলা আর অনাদরে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মাত্র ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ এবং মিনারসহ প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার এই মসজিদটি এক সময় গভীর শালবনবেষ্টিত এলাকায় নির্মিত হয়েছিল।

মসজিদটির দেখভাল করা ইউসুফ আলী বলেন, এটি তার পূর্বপুরুষদের হাতে তৈরি। সে সময় এই অঞ্চল ছিল জনবসতিশূন্য, বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিচরণভূমি। তখন ৪ থেকে ৮ জন মুসল্লি দুই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন। এখন এলাকার জনসংখ্যা বেড়েছে, জঙ্গল বিলীন হয়ে গেছে, কিন্তু মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে।

২০১১ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে মসজিদটিতে সীমিত সংস্কার করা হয়। নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত মিস্ত্রী নূর আলম বলেন, সংস্কারের সময় দেখা যায়, গম্বুজের ওপর একটি বটগাছ গজিয়ে গিয়েছিল, ইট খসে পড়ছিল দেয়াল থেকে। পুরনো নকশা অনুসরণ করে ৪টি মিনার ও ১টি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়, কিন্তু বর্তমানে ২টি মিনার ও ১টি গম্বুজই টিকে আছে।

স্থানীয়রা বলছেন, যদি এই মসজিদটি সংস্কার ও সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়, তবে এটি কেবল ধর্মীয় নয়, বরং পর্যটন শিল্পেরও এক আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে। দেশি-বিদেশি পর্যটক ও গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে ক্ষুদ্র ব্যবসা, উন্নয়ন প্রকল্প ও স্থানীয় অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর সুযোগ।

স্থানীয় শিক্ষাবিদ মাহাতাব উদ্দীন মাস্টার বলেন, এক সময় এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া হতো। এখন শুধু ঈদের সময় ব্যবহৃত হয়। এটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, আমাদের ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। যদি এটি সংরক্ষিত না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক মহামূল্যবান ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি আরো বলেন, মসজিদটি শুধু ধর্মীয় চর্চার স্থান নয়, এটি স্থাপত্যশৈলী ও ইতিহাসের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে এমন মসজিদ বাংলাদেশে খুব বেশি দেখা যায় না যেগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে আছে, অথচ সরকারি সংরক্ষণের আওতার বাইরে পড়ে আছে।

বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, মসজিদটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ। এটা শুধু ধর্মীয় দিক নয়, জাতিগত ইতিহাস ও পরিচয়েরও ধারক। আমি চাই যে সরকারই থাকুক, এটি যেন জরুরি ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে সংরক্ষণ করা হয়।

এদিকে বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, ঐতিহাসিক এই মসজিদটির খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণাদি পাঠিয়ে দ্রুতই এটি সংরক্ষণের আওতায় আনতে চাই। 

সানজানা

×