ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গান গেয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন এক ঝাঁক শিক্ষার্থী

শেখ ফয়সাল আহমেদ, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মিরপুর, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২৬ মে ২০২৫

গান গেয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন এক ঝাঁক শিক্ষার্থী

ছবি: জনকণ্ঠ

 

এই দেশের প্রতিটি ক্লান্তিলগ্নে তরুণরাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে—চুপ করে বসে থাকেনি কোনো দুর্যোগে। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত, দেশের ইতিহাসে বারবার প্রমাণ মিলেছে তরুণদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের। আজও সেই ধারাবাহিকতায়, তরুণদের চোখে স্বপ্ন—একটি বেকারমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে এক ঝাঁক সংগীতপ্রেমী শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি "বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার" স্লোগান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে একটি ভিন্নধর্মী সংগঠন ‘আহ্বান’। সংগঠনটির মূলমন্ত্র—গানের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং সেই সম্পর্ককে ভিত্তি করে গড়ে তোলা সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড।

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রতিদিন বিকেলে দেখা যায়, উন্মুক্ত মঞ্চে গান গাইছে কিছু তরুণ-তরুণী। যে কেউ চাইলে অংশ নিতে পারে, নেই কোনো বাঁধা বা আনুষ্ঠানিকতা। গান হয়ে উঠেছে মানুষের আনন্দের খোরাক, আর একইসাথে হয়ে উঠেছে মানুষের মধ্যে হৃদ্যতার সেতুবন্ধন। মঞ্চের পাশেই রাখা ফ্ল্যাক্স ভর্তি চা, লেখা আছে—"গানের বিনিময়ে এক কাপ চা, এই চায়ের অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়"। এক অভিনব প্রয়াস!

এই শিক্ষার্থীরা কেউ কারও বাবার রাজকন্যা, কেউ রাজপুত্র। তারা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেউ ইউল্যাব, কেউ ব্র্যাক বা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, কবি এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। দিন দিন আরও তরুণ যুক্ত হচ্ছেন এই স্বপ্নযাত্রায়।

সংগঠনের সদস্য পিয়াল, ধরিত্রী, শাকিল, রুমি, আলিফ, সানশির দাদা, বিশাল, শ্রাবণ, আসিফ ও ফ্যান্টম জানান—

"গানের মাধ্যমে আমরা খুব দ্রুত মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা জানাতে পারছি। সমাজে অনেক প্রতিভাবান তরুণ আছেন, যাঁরা কখনো নিজেকে প্রকাশ করতে পারেননি। আমাদের এই উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্মে তাঁরা আসছেন, গাইছেন, এবং নিজেরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছেন।"

চা বিক্রি কেন? উত্তরে তাঁরা বলেন, "আমরা সবাই শিক্ষার্থী, তাই ছোট পরিসরে শুরু করেছি। বিভিন্ন জায়গায় উন্মুক্ত মঞ্চে গান গেয়ে দিনে ২০০-৩০০ থেকে শুরু করে কখনো ২০০০ টাকার মতো আয় হয়। সেই অর্থ দিয়েই আমরা ইতোমধ্যে কয়েকজনকে স্বাবলম্বী করেছি—কারো সবজি ব্যবসা শুরু করিয়েছি, কাউকে চায়ের দোকান দিয়েছি, পথশিশু ও অসহায় মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছি।"

তারা আরও জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, শহরে আসা কৃষকদের পুনরায় কৃষিকাজে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ এবং নদী ও পরিবেশ রক্ষার কাজেও যুক্ত আছেন।

"আমাদের মূল লক্ষ্য বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। একজন বেকারকে আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা বানাতে পারলে, সে নিজেও আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থান করতে পারে। এভাবেই ধীরে ধীরে তৈরি হবে একটি আত্মনির্ভরশীল সমাজ।"

মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান,
"তরুণদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। যদি তাদের চিন্তাভাবনায় থাকে একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন, তবে তা একদিন বাস্তব হবেই। রাষ্ট্র গঠনে তরুণদের ভূমিকা অপরিহার্য, তাদের এই কর্মপ্রচেষ্টা অনুপ্রাণিত করবে আরও অনেককেই।"

মুমু

×