ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ড. ওয়াজেদ মিয়ার আজ মৃত্যুবার্ষিকী

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ৮ মে ২০২৪

ড. ওয়াজেদ মিয়ার আজ মৃত্যুবার্ষিকী

ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ জামাতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী, প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার আজ ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের ৯ মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। 
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন প্রখ্যাত এই বিজ্ঞানী।

মরহুম আবদুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জুন নেছা বিবির সন্তান ওয়াজেদ মিয়াকে সবাই ‘সুধা মিয়া’ নামেই চিনতেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৫৬ সালে জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানের ¯œাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে ™ি^তীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।

১৯৬৩-৬৪ শিক্ষা বছরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ সম্পন্ন শেষে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন মেধাবী ছাত্র ওয়াজেদ মিয়া। পুরো উপমহাদেশে প্রথম শ্রেণির এই বিজ্ঞানী ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দিয়ে চাকরি জীবন শুরু করেন।

পরে আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে ইতালির খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাঁকে ‘অ্যাসোসিয়েটশিপ’ প্রদান করে। ১৯৬৯ সালের নবেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরে ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়া।  
বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগে যোগ দেন তিনি। ১৯৬১-১৯৬২ শিক্ষা বছরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এবং ওই বছরেই জেনারেল আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হন।

আজন্ম সৎ ও নিভৃতচারী এই বিজ্ঞানী ১৯৬৭ সালের ১৭ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সময় ড. ওয়াজেদ মিয়া জার্মানিতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।  
ব্যক্তি জীবনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে অভ্যস্ত এই বিজ্ঞানীর দু’সন্তান। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত ৮টায় প্রথম সন্তান কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়ের জš§। একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন পুতুলও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর জামাতা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বামী হওয়া সত্ত্বেও ড. ওয়াজেদ মিয়াকে কখনো ক্ষমতার কাছাকাছি দেখা যায়নি। নির্লোভ, নিরঙ্কার, সৎ এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। 
ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ রংপুর মহানগরীতে, পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন. ড. ওয়াজেদ মিয়ার পরিবার, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠন, ড. ওয়াজেদ মিয়া স্মৃতি সংসদ ও ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন ফাতিহা পাঠ, কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল এবং গরিবরদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 

×