ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

নাজির হোসেনের পটচিত্রে ‘বাঘের দেশে বৈশাখ’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২ এপ্রিল ২০২৪

নাজির হোসেনের পটচিত্রে ‘বাঘের দেশে বৈশাখ’

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে ‘বাঘের দেশে বৈশাখ’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থী

প্রদর্শনালয়ে প্রবেশ করতেই যেন চারপাশ  থেকে ঘিরে ধরে বাঘের দল। তবে এই বাঘমামারা কেউ মুক্ত নয়। সবাই ক্যানভাসবন্দি। তার ওপর আবার এসব বাঘের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যে হিং¯্রতা নেই। সে কারণেই প্রতিটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার হয়ে উঠেছে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। মানবসমাজের সঙ্গে মিলেমিশে কেটে যায় তাদের সুন্দর সময়। সেই সুবাদে কখনো তারা জেলের সঙ্গে মাছ ধরতে যায় মাঝ নদীতে। কোনো বাঘ আবার শিশুদের সঙ্গে মেতে ওঠে খেলাধুলায়।

এমনকি শহরের সড়কে আরোহী নিয়ে রিক্সা চালাতে দেখা যায় বাঘমামাকে। শুধু কি তাই? শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাঠশালাতেও পড়তে যায় তারা। মনের আনন্দে বুকের মাঝে বই চেপে স্কুলের পথে হাঁটতে থাকে। এখানেই থেমে যায় না বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণীটির মজার কর্মকা-। কৃষান-কৃষানির সঙ্গে গাছতলায় বসে একতারায় সুর তোলে বিরল প্রজাতির প্রাণীটি। কখনোবা গরুর বদলে বাঘই মেঠোপথে টেনে নিয়ে যায় গরুর গাড়ি।

এমনকি বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচেও অংশ নিতে দেখা যায় বাঘমামাকে। আর এভাবেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরপুর বাঘের ছবি এঁকেছেন নাজির হোসেন। পটচিত্রে চিত্রিত চিত্রকর্মগুলো নিয়ে ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে এই প্রদর্শনী। নববর্ষ উদ্যাপনের অংশে পরিণত হওয়া শিল্পায়োজনটির শিরোনাম বাঘের দেশে বৈশাখ। 
পটুয়া নাজির হোসেনের পটচিত্রে রয়েল বেঙ্গল টাইগার হাজির হয়েছে বিভিন্ন রূপে। লিপ্ত হয়েছে বহুমাত্রিক কর্মকা-ে। পাশাপাশি বাংলা পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন লোকজ উপাদানকেও ধারণ করেছে। বাংলার বাঘ হলো বাংলাদেশের অদম্য চেতনার প্রতীক।  সেই সুবাদে শিল্পীর ছবিতে বাঘ কেবল একক আইকন হিসেবেই চিত্রিত হয়নি, সব ছবিতেই তার গল্প আছে। প্রতিটি ছবিতেই প্রিয় এই প্রাণীটির প্রতি মমতা দেখা যায়।

তাই নাজির হোসেন তার পটচিত্রে সবসময় বাঘকে বিভিন্ন রূপে এবং বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন কল্পনার মাধ্যমে। শিল্পীর ছবির ভাবনাটি হাস্যরসের সঙ্গেও সম্পর্কিত।  শিল্পীর বাঘ জমিতে হালচাষ করে, একতারা, ঢাক-ঢোল বাজায়, রেলগাড়ি ও বিমান চালায়, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-ভালোবাসায় বন্ধুর মতো পাশে থাকে।  শিল্পীর পটচিত্রে আরও স্থান পায় কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, বাউল, ফকির, মাঝি ইত্যাদি। আবহমান বাংলার সার্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখকে উপলক্ষ করে  ছবিগুলো এঁকেছেন নাজির হোসেন।
বৃহৎ থেকে মাঝারি ও ছোট ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে ছবিগুলো। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক চিত্রকর্মের সম্মিলন ঘটেছে প্রদর্শনীতে। এই শিল্পায়োজনের শেষ আজ মঙ্গলবার। বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

×