
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালের ১৩ জুন ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এই আগ্রাসন এখন পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৮০ জন এবং ইসরায়েলে ১০ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস দাবি করেছেন, "ইরাক আগ্রাসনের ভুল থেকে কিছুই শেখেনি ইসরায়েল।"
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই হামলাকে ‘প্রাক-প্রতিরোধমূলক’ (pre-emptive) হিসেবে চিহ্নিত করলেও এটি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণের মতোই একটি কৌশলগত বিপর্যয় হিসেবে পরিগণিত হতে পারে বলে মত দিয়েছেন হেস।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছে—নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফরদো। কিন্তু এই হামলাগুলোর প্রকৃত প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। নাতাঞ্জ স্থাপনাটি এতটাই গভীর ভূগর্ভে যে যুক্তরাষ্ট্রের 'Massive Ordnance Penetrator' ছাড়া তা ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র এই ধরণের অস্ত্র ইসরায়েলকে দেয়নি।
আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে এটিকে একক ইসরায়েলি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে দূরত্ব বজায় রাখলেও পরে ট্রাম্প দাবি করেন যে তিনি অবহিত ছিলেন। তবে ওয়াশিংটনের আসল ভূমিকা এখনও পরিষ্কার নয়।
এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান কূটনৈতিক আলোচনা কার্যত ভেঙে পড়েছে, যা স্বল্পমেয়াদে নেতানিয়াহুর পক্ষে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েল যদি ভাবে এই আগ্রাসনের ফলে ইরানের জনগণ তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামবে, তবে তা একটি মারাত্মক ভুল হতে পারে। বরং এই আগ্রাসনের ফলে ইরানিদের মধ্যে তেল আবিববিরোধী মনোভাব আরও তীব্র হতে পারে।
এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র থাকা দরকার এমন দাবিও এখন ইরানের জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে।
হেসের মতে, এই ‘অগ্রিম হামলা’ কৌশল শুধু ইরানের নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা বয়ে আনতে পারে। তিনি বলছেন, ইসরায়েল যেভাবে ইরানকে লক্ষ্য করে আগ্রাসন শুরু করেছে, তা অনেকটা ২০০৩ সালে আমেরিকার করা ইরাক যুদ্ধের মতো। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার দাবি করেছিলেন, ইরাকের কাছে ভয়ঙ্কর অস্ত্র রয়েছে—তাই আগেই হামলা চালানো দরকার। কিন্তু সেই যুদ্ধের ফল হয়েছিল বিপর্যয়: ইরাকের সরকার পড়ে যায়, দেশজুড়ে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা, এবং সেই শূন্যতার সুযোগে জন্ম নেয় ভয়াবহ জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএস, যারা সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েল এখন যদি ভাবে যে, ইরানের বর্তমান সরকারকে ফেলে দিয়ে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো আরেকটি ‘বন্ধুসুলভ’ সরকার বসাতে পারবে—তাহলে সেটা একেবারেই বাস্তবতার বাইরে। কারণ, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে কোনো সীমানা নেই; ইসরায়েলের পক্ষে ইরান দখল করা বা সেখানে সেনা পাঠানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে, আমেরিকাও এখন আর এমন সামরিক অভিযানে অংশ নিতে চায় না, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়।
তাই বাস্তবতা হলো, ইরানের সরকার পতনের যে কল্পনা ইসরায়েল করছে, সেটি একেবারেই অবাস্তব এবং বিপজ্জনক কল্পনা মাত্র। বরং এই হামলা ইরানকে আরও কঠোর করে তুলবে এবং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আরও নষ্ট করবে।
সূত্র: https://www.aljazeera.com/opinions/2025/6/15/israel-has-learned-no-lessons-from-iraq
মুমু ২