
মে ফ্লাওয়ার... যথারীতি ফুটেছে মে মাসে
ইংরেজি কোন্ মাসটি চলছে এখন? যদি ভুলে গিয়ে থাকেন, যদি কোনো কারণে হিসেব না মিলে তাহলে একটু প্রকৃতির দিকে তাকান। মে ফ্লাওয়ার ফুটেছে কি? খোঁজ করুন। যদি ফোটে তাহলে মাসটিও মে। কারণ, শুধু মে মাসেই এ ফুল ফোটে। ফুল দেখে তাই মাস সম্পর্কে বলে দেয়া যায়। একইভাবে মে মাস শুরু হয়েছে জেনে বাগানের দিকে তাকালে ঠিক দৃশ্যমান হয় মে ফ্লাওয়ার।
কাছাকাছি বা একইসময়ে আরও অনেক জাতের ফুলে ফুটে থাকে। এবারও ফুটেছে। কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে রাজধানী। মৃদু হাওয়ায় দুলছে সোনালু ফুলের ঝুলন্ত মঞ্জরি। কিন্তু দুটোই মে মাস শুরুর আগে থেকে ফুটতে শুরু করেছিল। মাস শেষেও থেকে যাবে। মে ফ্লাওয়ার আলাদা। মাস একদিকে শুরু হয়, অন্যদিকে ফুটতে শুরু করে ফুল। এমনকি লক্ষ্য করে দেখা গেছে, আগের মাসে যে টবে লম্বা সবুজ পাতা ছিল শুধু, মে মাসের প্রথম দিন সেখানেই লাল রঙের আকর্ষণীয় ফুল উঁকি দিয়েছে! মে মাস শেষে মে ফ্লাওয়ারও হারিয়ে যায়।
এ ফুলের তেমন ঘ্রাণ নেই। তবে দেখতে খুবই ব্যতিক্রম। যারা দেখেছেন আগে, তাদের কথা আলাদা। নতুন করে কেউ দেখলে অবাক হবেন। মে ফ্লাওয়ার গোলাকার হয়। তাই বল লিলি বা গ্লোব লিলি নামেও অনেকে চেনেন। একই ফুলকে পাউডার পাফ লিলি, আফ্রিকান ব্লাড লিলি নামে ডাকা হয়। সাধারণ ফুলের মতো পাপড়ি হয় না মে ফ্লাওয়ারের। গড়নের দিক থেকে কদম ফুলের সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। তবে কদমের চেয়ে আকারে বেশ বড়। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে কাঁটায় ঘেরা। অনেকগুলো সুচ বুঝি মুখ বের করে আছে। হাত বাড়ালেই বিপদ! আদতে তা নয়। ফুলের গায়ে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিলে নরম কোমল একটা অনুভূতি হয়।
মে ফ্লাওয়ারের রং লাল। প্রথমে হালকা লাল। ক্রমে তা রক্তের মতো গাঢ় লাল হয়ে ধরা দেয়। এ কারণে ফুলটির দিকে তাকিয়ে মে দিবসের সেই মহা ইতিহাসের কথাও যেন মনে পড়ে যায়। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরে ঐতিহাসিক শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে এ প্রতিবাদ গড়ে তোলে। কিন্তু যথারীতি পড়তে হয় বাধার মুখে। পুলিশ শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। প্রায় ১১ জন শ্রমিক নিহত হয় সেদিন। ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় আরও ৬ জনকে। প্রতি বছর পহেলা মে পৃথিবীজুড়ে এই নিষ্ঠুর ইতিহাস স্মরণ করা হয়। একই দিন ফোটা রক্তলাল মে ফ্লাওয়ার যেন একাত্মতা ঘোষণা করে মে দিবসের চেতনার সঙ্গে।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, মে ফ্লাওয়ারের অস্তিত্ব প্রথম আবিষ্কৃত হয় আফ্রিকা মহাদেশে। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে হয়। বাংলাদেশেও বহুকাল ধরে আছে। গাছ লম্বায় ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া হয়। পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। একটি গাছে একাধিক ফুল হয়। পরিণত ফুল অক্ষত অবস্থায় ঝরে পড়ে না। আস্তে আস্তে ফুলের বিভিন্ন অংশ খসে পড়তে থাকে। এক সময় হাওয়ার মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায়।
নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অবশ্য ততদিনে একই গাছে নতুন ফুল ফুটতে শুরু করে। এভাবে মে মাসের প্রায় পুরোটাজুড়েই সৌন্দর্য বিলিয়ে যায়। গাছ থেকে সব ফুল ঝরে পড়ার পর পাতার সৌন্দর্য প্রধান হয়ে ওঠে। কয়েক মাস এই পাতারা সতেজ থাকে। তারপর পাতা কা- সবই শুকিয়ে যায়। কবিগুরু যেমনটি লিখেছিলেন, ‘দেখা দেবে বলে তুমি হও যে অদর্শন ...।’ মে ফ্লাওয়ারও দেখা দেয়ার শর্তেই মাটির নিচে গুটিয়ে রাখে নিজেকে।