ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক নিয়ে আরও কিছু কথা

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

 নিরাপদ সড়ক নিয়ে আরও কিছু কথা

সারাদেশে অসংখ্য ব্রিজ, কালভার্ট আছে। নতুন-পুরনো অনেক ব্রিজে রেলিং আছে এবং অনেক ব্রিজে রেলিং নেই। এ সমস্ত ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদি বিষয়ের ওপর একটি নিবিড় স্টাডি করা দরকার এবং স্টাডির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। দূরপাল্লার রাস্তায় ফুটপাথ সম্পর্কে : দূরপাল্লার অর্থাৎ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের মহাসড়কগুলো অনেক ছোট ছোট বাজারের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে চলে গেছে। রাস্তার ওপর দোকান-পাট, বাজার বসে। সে সব বাজারেও দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। তাই রাস্তার ওপর থেকে সব জঞ্জাল সরিয়ে ফেলতে হবে অর্থাৎ এই বাজারগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। নইলে এই বাজারের পাশ দিয়ে ডাইভারশন রাস্তা তৈরি করলে দুর্ঘটনার হার কমবে। দূরপাল্লার রাস্তার জনপদহীন রাস্তার দু’ধারে জনগণের হাঁটার জন্য যে রাস্তা বা স্থান রাখা হয় তা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, আশপাশে কোনও গ্রাম নেই শুধু ধানক্ষেত এবং পানি। তাই এসব এলাকায় ফুটপাথ রাখার প্রয়োজন নেই। পরীক্ষামূলকভাবে একটি রাস্তায় এ রকম করা যেতে পারে। পরিবহন শ্রমিকের নিরাপত্তা : পরিবহন শ্রমিকও এদেশের জনগণ। তাই তাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সরকারের ও যানবাহনের মালিক পক্ষকে নিতে হবে। তাদের আয়ের/বেতন ভাতার পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রত্যেক মাসের শেষ দিনে অথবা পরবর্তী মাসের ১ম তারিখে দিতে হবে। কমিশন ভিত্তিতে ড্রাইভারের বেতন দিলে যাত্রী তুলার জন্য রাস্তায় প্রতিযোগিতা থামবে না এবং দুর্ঘটনাও ঘটবে। দুর্ঘটনা ঘটলে যদি ড্রাইভারদের কোন দোষ পাওয়া যায় এবং ঐ ড্রাইভাররা যদি আহত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গাড়ীর ড্রাইভারকে প্রতিপক্ষ চিন্তা করা যাবে না। এরাও এদেশের সন্তান। কোন ভিন্নগ্রহ থেকে এরা আসেনি। ড্রাইভারদের একটি সরকারী বেতন স্কেলের মতো বেতন স্কেল তৈরি করে তা মালিক পক্ষকে যথারীতি মেনে চলার দিক-নির্দেশনা দিলে তাদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি হবে এবং নিজের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে আরও সচেতন হবেন এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। যাত্রাবিরতির জন্য প্যাসেঞ্জার শেড তৈরি করা : দুরপাল্লার বাসযাত্রীদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য সরকারী উদ্যোগে একটি ক্যান্টিনসহ বাথরুম ও পানির ব্যবস্থা রাখা। যাতে করে যাত্রী/ড্রাইভাররা কিছু সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি দিয়ে একটু ফ্রেশ হতে পারেন। গাড়িচালকদের পরিধান নির্দিষ্ট করে দেয়া : পেশাদার গাড়িচালকদের একটি সুনির্দিষ্ট ড্রেসকোড থাকবে এবং পায়ে সু জুতা এবং শার্ট-প্যান্ট পরে গাড়ি চালাতে বাধ্যতামূলক করতে হবে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন : সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন যদি সরকারী রেজিস্ট্রিভুক্ত শ্রমিক বার্গেইনেইন এজেন্সি হয়ে থাকে, তাহলে তাদের গঠন প্রক্রিয়াতে কি কি আছে, তাদের কার্যক্রম বা উদ্দেশ্য কি তাদের সাংবিধানিক কাঠামো এবং বর্তমানে তাদের বাস্তবে কি করার কথা কিন্তু কি করছে ইত্যাদি পর্যালোচনা করে তাদেরকে সরকার কর্তৃক আরও সুসংগঠিত করা এবং যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করে তাদের সঙ্গে নিয়মিত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সভায় মিলিত হয়ে দিক-নির্দেশনামূলক পরামর্শ রাখা বাঞ্ছনীয়। তারাই হচ্ছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি জাতীয় চালিকাশক্তি নেতৃবৃন্দ। তাদের শুধু বাস্তবায়নকারী হিসেবে ভাববেন না, তাদেরকেও অংশগ্রহণ ও সঠিক নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শুধু তাদের ওপর সবসময় কথার খড়গ চালানো যাবে না। কোন শ্রমিক সংগঠনের নেতা জনপ্রতিনিধি বা অন্যকোন সরকারী দায়িত্বে নিয়োজিত হলে সে পদ থেকে তাকে অবশ্যই অব্যাহতি নিতে হবে। আন্তঃজেলায় রাস্তাগুলোকে ফোর-ওয়ে করা: ঢাকা থেকে সকল জেলা সংযোগকারী রাস্তাগুলোকে ফোর-ওয়ে করলে সারাদেশেই যানজট কমবে এবং সময়ও বাঁচবে। যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল সেই দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সামাজিক নিরাপত্তা। ফেরিঘাট : যে সকল নদীতে এখনও পারাপারের জন্য ফেরী ব্যবহার করা হয়, সেই সকল ফেরিঘাটে বাস/ট্রাক যাতে নিরাপদভাবে উঠা-নামা করতে পারে সেভাবে ঘাটগুলো বেঁধে দিতে হবে। পর্যায়ক্রমে ফেরিঘাটে ব্রিজ তৈরি করা শেষ হলে এবং ফেরি সার্ভিস সারাদেশে একবারে বন্ধ হয়ে যাবে। যোগাযোগের আরও উন্নতি হবে। যাত্রী নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। ড্রাইভার প্রশিক্ষণ কোর্স : পৃথিবীর সকল উন্নত দেশে ড্রাইভারদের শিক্ষার জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল আছে। ৩ মাসের কোর্সের পর একটি পরীক্ষায় পাস করলেই এবং লিখিত ও মাঠ পরীক্ষায় টিকলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়। এর জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। ছাল-বাখল তুলা বাস : যে সকল বাসের বাইরের বডির ছাল বাখল তুলা, তা মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে। এগুলো আমাদের ও শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে ভীষণ প্রভাব ফেলে। ঢাকা শহরে বাসের বডির দিকে তাকালে দেখা যায় সমস্ত বাস জুড়ে নানান রঙের দাগ। কোনটাতে দেখবেন দুর্ঘটনার দাগ, কোনটাতে দেখবেন দুই বাসে ঘষা লাগা দাগ। এগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে বেশি টাকা-পয়সা লাগে না। ইচ্ছা থাকলেই করা সম্ভব। দূরপাল্লার বাস যেগুলো গ্রামের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়, সেই সকল স্থানে রাস্তার ওপর ধান শুকানো, গরু চরানো ইত্যাদি আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে। প্রতিবছর বন্যার পানির নিচে সে সব রাস্তা ডুবে যায়, সেসব স্থানের রাস্তা বন্যার পানির স্তরের ওপর পর্যন্ত উঁচু করে দিতে হবে। বাস যাত্রায় দুর্ঘটনা ঘটলে, দুর্ঘটনায় যারা মারা যায় তাদের অভিভাবককে বাস মালিক/সরকার কর্তৃক ক্ষতিপূরণ ধার্য করে দিতে হবে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যপদ নেয়ার যোগ্যতা ও নীতিমালা নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। পরিবহন শ্রমিক নয় এমন লোককে শ্রমিক সংগঠনের সদস্য করা যাবে না বা ঐ সংগঠনের নেতা বানানো যাবে না। আমাদের দেশের মতো সড়কের ভৌগোলিক অবস্থা পৃথিবীর কোন দেশে আছে কি-না আমার জানা নাই। আন্ত:জেলা সকল সড়ক লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সড়কগুলা সমতল ভূমি থেকে ৮-১০ফুট উচ্চতায় তৈরি করা। কারণ সমতল ভূমি জলমগ্ন থাকে বলে। এই রকম রাস্তা আরও নতুন করে তৈরি না করে সকল আন্তঃজেলা রাস্তাকে ফোর-ওয়ে করলে বাড়তি যানবাহনের চাপ কমবে এবং জনসাধারণও ট্রাফিক জ্যামের হাত থেকে রক্ষা পাবে। বন্যার পানির সময় যে পানির ধাক্কা লেগে রাস্তা ভাঙ্গে, একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, আশপাশের চলমান নদীগুলোর নাব্য কমে যাওয়ায় এবং যথাযথভাবে নদীর বাঁধ সংরক্ষণ না করায় নদীর স্রোত নদীর কিনারা ভেঙ্গে জলাশয় সৃষ্টি করে এবং রাস্তায় আঘাত করে। এই সকল এলাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের না জানার কথা নয়। এই বিষয়গুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার জন্য নীতি-নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লেখক : আহ্বায়ক, ক্যাম্পেইন ফর রোড সেফ্টি, নিউইয়র্ক
×