ফুটবল একটি জনপ্রিয় খেলা। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এই খেলা হয়। এটা সবাই না খেললেও সম্ভবত এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ফুটবল পছন্দ করে না। আগে শুধু এটা ছেলেরা খেলত, সমস্ত আয়োজনও তাদের কেন্দ্র করেই হতো। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। ফলে মেয়েরাও এখন মাঠে নেমেছে এবং ফুটবল-ক্রিকেট খেলায় অংশ নিচ্ছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক বড় বড় দেশকে পরাজিত করে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। যেখানে একটা বড় ট্রফি জেতা ছেলেদের দ্বারা সম্ভব হয়নি, সেটা বাংলার মেয়েরা করে দেখিয়েছে। কিন্তু এটাকে অনেকেই বিরূপ দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। মেয়েরা মাঠে ও তাদের পায়ে বল, এটা দেখে অনেকের চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। তাদের মনের বদ্ধমূল ধারণা যে, মেয়েরা কেন দৌড়াদৌড়ি করবে, তারা শুধু ঘরেই বসে থাকবে। তাদের কর্ম শুধু গৃহে আবদ্ধ থাকা। বিশেষ করে আমাদের গ্রাম বাংলায় এটাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। যে মেয়েরা ফুটবল বা এ জাতীয় কোন খেলাধুলা করে, তাদের নির্লজ্জ বলা হয়।
পাকিস্তান আমল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে যখন মেয়েদের গৃহবন্দী করে রাখা হতো যা আমরা বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে জানতে পারি। যেখানে চোর সব কিছু চুরি করে নিয়ে গেলেও পর্দার অন্তরাল থেকে মহিলাটি বের হননি। তবে আনন্দের কথা হলো, যে পাকিস্তান আমাদের দেশের মেয়েদের সঙ্গে এমন আচরণ করেছিল, সেই পাকিস্তানকেই ক’দিন আগে আমাদের দেশের মেয়েরা ১৪ গোলে পরাজিত করে। তাই, লোকে যা বলে বলুক, ওসব যদি আমরা না ভেবে একটু ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি, তাহলে দেখব ওসব হলো গোয়ার্তুমি ছাড়া আর কিছু নয়। যেখানে অনেক বৃহৎ বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র মেয়েদের জন্য ফুটবলের দ্বার খুলে দিয়েছে, সেখানে আমরা কেন নয়? সবাই যখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা কেন পিছে পড়ে থাকব? আমাদের থেকেও অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো যদি আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে তাদের অর্জন দেখাতে পারে, তাহলে আমরা কেন সেই প্রাচীন আমলের ধারণা নিয়ে পড়ে থাকব?
সময় পরিবর্তন হয়েছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এখন সম্ভাব্য সবকিছুই করতে হবে। যেহেতু মহিলা ফুটবল এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশই ফুটবলে অংশ নিচ্ছে, সেহেতু আমাদেরও কিছু করে দেখাতে হবে। বাংলার মেয়েরা এটা করে দেখাচ্ছেও, তাই তাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা না পোষণ করে তাদের উৎসাহ দিতে হবে, তাদের ফুটবলে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাই, ফুটবলে মেয়েদের আকৃষ্ট করতে হলে যা করতে হবে তা হলো, ফুটবলের ইতিবাচক দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের দেশের মেয়েরা যে বর্তমান অনেক ভাল খেলছে, সেটা প্রচার করতে হবে। বিশেষ করে গ্রাম বাংলায় মেয়েদের খেলাধুলার ব্যাপারে যে সব অমূলক ধারণা তথা কুণ্ড ধারণা রয়েছে, সেগুলোকে দূরীভূত করতে হবে। যোগ্য খেলোয়াড় বাছাই করতে যোগ্য নির্বাচক নিয়োগ করতে হবে। তা হলেই বাংলার মেয়েরা ফুটবলে আর ভাল করবে বলে আশা করা যায়।
-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: