ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

বেঁধেছ যে প্রেমডোরে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বেঁধেছ যে প্রেমডোরে

রবীন্দ্রনাথ একটি গানে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে বলেছেন, এ জগত চরাচরে বেঁধেছ যে প্রেমডোরে। রবীন্দ্রনাথ গানের এই অংশে যেন স্বামী-স্ত্রীর বিবাহিত জীবনের পূর্ণতাকেই প্রকাশ করেছেন। বিবাহিত জীবনে প্রবেশের মধ্য দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে প্রেমের বন্ধন রচিত হয় তাতে বিচ্ছেদ নয় বরং তা অটুট রাখাই স্বামী-স্ত্রীর প্রধান কর্তব্য। বাংলাপিডিয়ার তথ্য মোতাবেক, বিবাহ মানব সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যুগে যুগে প্রতিষ্ঠানটি এর আদিরূপ থেকে বর্তমান রূপে উপনীত হয়েছে। তাই বলা যায় যে, বিবাহ হচ্ছে সমাজ ও ধর্মের একটি প্রাচীন প্রথা। বিবাহ নারী-পুরুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ অংশ। বিবাহই নারী-পুরুষকে একে অপরের সঙ্গে একই বন্ধনে আবদ্ধ হতে সাহস যোগায়। বিবাহের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সহভাগিতা এবং দৈহিক চাহিদা পূরণের বৈধ অনুমতি লাভ করে। পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, ‘স্বয়ং পরমেশ্বর যা যুক্ত করেছেন, মানুষ যেন তা কখনো বিচ্ছিন্ন না করে।’ বিবাহ প্রথা যদিও যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ঠিক তদ্রƒপ বিবাহের বিচ্ছেদও প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রবাহমান; যদিও বিবাহ বিচ্ছেদ স্বামী-স্ত্রী কারও জন্য কাম্য নয়। স্বামী-স্ত্রী কেউ বিবাহ বিচ্ছেদকে সহজে মেনে নিতে পারে না। বিবাহে স্বামী-স্ত্রীর নিজের ঘরে যে বিচরণ করার কথা ছিল বিচ্ছেদের ফলে তা পথ বদলে চলে যায় কোর্টের বারান্দায়। কয়েক দশক পূর্বেও বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের চিত্র ততটা ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে। আর এই সংখ্যা ঢাকা শহরের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি লক্ষণীয়। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলো পর্যালোচনা করলে মোটামুটি প্রতিটি বিচ্ছেদে একই ধরনের কারণ উঠে আসে। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী কারণটি হচ্ছে ব্যক্তিত্বের অমিল অর্থাৎ দু’জনের মধ্যে পারস্পরিক অসঙ্গতি। বিশেষ করে নিজস্ব মতবাদ, মতামতের আধিক্য, ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও ইচ্ছাতে যখন দু’জনের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয় তখন দাম্পত্য জীবন যাপন করা জটিল হয়ে পড়ে। এছাড়াও অন্যান্য নানাবিধ কারণগুলোর মধ্যে অন্য নারী বা পুরুষের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, সামাজিক বন্ধনমুক্ত জীবন যাপন, আর্থিক সমস্যা, স্বামী-স্ত্রীর যথাযথ যোগাযোগের অভাব, সংসারে মানসিক প্রশান্তির অনুপস্থিতি ও সন্দেহ প্রবণতা ছাড়াও আরও নানাবিধ কারণে ইদানীং বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। বিচ্ছেদ কখনও শান্তি আনতে পারে না; বরং অনিশ্চয়তার জীবনে প্রবেশে সাহায্য করে। সে অনিশ্চয়তা স্বামী-স্ত্রীর জীবন থেকে শুরু করে সন্তানদের জীবনের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। বিবাহ বিচ্ছেদ মানুষের মনস্তত্ত্বে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে আর সেই ক্ষত ধীরে ধীরে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে সমাজের নৈতিক মূল্যবোধগুলোতে পচন ধরায়। যে বাসর ঘর থেকে মধুর স্বপ্নের বীজ বপন শুরু হয় তা সোনালি সংসার গড়তে সাহায্য করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, বিবাদ, মনোমালিন্য আসাটাই স্বাভাবিক কিন্তু তা যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা করা যায় তাহলে সে সংসার টিকে থাকে আজীবন। আর সেটাই হচ্ছে সংসারের প্রকৃত সুখ। ভাটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান পোপ ফ্রান্সিস ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি একদল বিবাহিত দম্পতিকে সুখী ও সাফল্যম-িত জীবন লাভের জন্য একে অপরের সঙ্গে ৩টি পদ্ধতি অনুমতি, ধন্যবাদ ও ক্ষমার চর্চার কথা বলেছেন। আর এই তিনটি পদ্ধতি যদি স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে চর্চা করে তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ অনেকাংশেই হ্রাস পেয়ে সংসার হবে সুখময়। বনানী, ঢাকা থেকে
×