ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিশ্বায়ন ॥ বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৭ জুন ২০১৮

বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা ও বিশ্বায়ন ॥ বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ

(গতকালের পর) বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিম-লে তুলে ধরার বঙ্গবন্ধুর প্রয়াস আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রত্যক্ষ করেছি। ১৯৫২ সালের ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর চীনের তৎকালীন রাজধানী পিকিং-এ আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের বিপুল করতালির মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আজ এই মহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এইজন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধীকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।... শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তোলার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আমাদের এই অঙ্গীকারের সহিত শহিদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন।” [সূত্র : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, লেখক এম এ ওয়াজেদ মিয়া, পৃ. ২০৫] জাতিসংঘের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান যিনি জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। পরবর্তীকালে ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ গণরায়ে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর যতবারই জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান করেছে, প্রত্যেকবারই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেছেন। শেখ হাসিনা শুধু ভাষণ প্রদান করেই তার দায়িত্ব শেষ করেননি, তিনি বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি উত্থাপন করেন। আমরা বিশ্বাস করি তার এই দাবি একদিন বাস্তবায়িত হবেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। বাঙালি জাতির জন্য এ এক গৌরব ও মর্যাদার বিষয়। এখন থেকে পৃথিবীর সকল জাতির মানুষ মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মদানকে স্মরণ করে নিজ নিজ মাতৃভাষাকে ভালোবাসবেÑ চর্চা করবে, এ হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য। মাতৃভাষাকে অবহেলা নয়- ভালোবাসো, চর্চা কর। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ব্যবহারের প্রচেষ্টা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এ সময়ে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই বাংলায় অনুবাদ করার লক্ষ্যে বাংলা একাডেমিতে অনুবাদ সেল গঠন করা হয়। সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই বিভিন্ন প্রকাশকও অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশে আগ্রহী হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের এই নীতি ও উদ্যোগের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্যেও। বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৫২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলা ভাষার ব্যবহার’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী এক আলোচনা চক্র উদ্বোধনকালে উচ্চতর শিক্ষাÑ বিশেষ করে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে মাতৃভাষার ব্যাপক প্রচলনে সহায়তা করার জন্য দেশের শিক্ষক ও ভাষাতত্ত্ববিদদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উচ্চতর শিক্ষার সর্বস্তরে যত শীঘ্র সম্ভব মাতৃভাষা চালু করা হইবে ততই দেশ ও জাতির মঙ্গল। তিনি আরও বলেন যে, স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই সরকার বাংলা ভাষাকে উচ্চতর শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করে এবং সরকারি অফিস-আদালতেও বাংলা ভাষা চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।... অফিস-আদালতে বাংলা ভাষাকে পুরোপুরি চালু করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বাংলা টাইপরাইটার সংগ্রহ করার জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলেও তিনি জানান। রাষ্ট্রপতি পরিভাষা ও প্রতিশব্দ তৈরির ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বলেন যে, যে সকল শিক্ষক ও ভাষাবিদ বাংলা ভাষার উন্নয়নে গবেষণা, অনুবাদের কাজে নিয়োজিত রয়েছে- বর্তমান সরকার তাদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। [সূত্র : দৈনিক সংবাদ ও ইত্তেফাক, ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২] বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার এ সময় ‘বাংলা উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করে। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বোর্ড প্রাঙ্গণে ‘উচ্চতর ডিগ্রি পর্যায়ে মাতৃভাষা শিক্ষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ড. মুহম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড. কুদরাত-ই-খুদা। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. মযহারুল ইসলাম, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শিল্পী কামরুল হাসান ও ড. আনিসুজ্জামান। [সূত্র : দৈনিক সংবাদ ও ইত্তেফাক, ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২] আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের ১৪ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি, মঙ্গোলিয়াসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করায় এটি আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। সে কারণে এ সম্মেলনকে প্রথম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হিসেবে অভিহিত করাই সমীচীন বলে মনে করি। ১৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় সম্মেলনের মূল মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কবি জসীমউদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নেন ভারতের প্রবীণ-নবীণ বিখ্যাত সব লেখক এবং শিল্পীরা। লেখক অন্নদাশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন শ্রী মনোজ বসু, মন্মথ রায়, শ্রীমতি রমা চৌধুরী, আশুতোষ ভট্টাচার্য, বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, অজিত কুমার ঘোষ, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ মিত্র, দেব নারায়ণ গুপ্ত, জীবেন্দ্র সিংহ রায়, বিনয় সরকার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সবিতাব্রত দত্ত, প্রবোধ কুমার ভৌমিক, বরেন গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ সেন, আশীষ সান্যাল, সুমিত্রা সেন, মায়া সেন, প্রদীপ কুমার ঘোষ প্রমুখ। এই সাহিত্য সম্মেলন আয়োজনের মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করা। নতুন চিন্তা, চেতনা ও মূল্যবোধের বিকাশে শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের দায়িত্ব, ভূমিকা এবং করণীয় সম্পর্কে প্রত্যেক বক্তাই মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেন। প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেনÑ “... আজকে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, তখন সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিসেবীদের কাছে আমার প্রত্যাশা আরো অধিক। যারা সাহিত্য সাধনা করছেন, শিল্পের চর্চা করছেন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেবা করছেন, তাদেরকে দেশের জনগণের চিন্তা-চেতনা, আনন্দ-বেদনা এবং সামগ্রিক তথ্যে তাদের জীবনপ্রবাহ আমাদের সাহিত্য ও শিল্পে অবশ্যই ফুটিয়ে তুলতে হবে। সাহিত্য-শিল্পে ফুটিয়ে তুলতে হবে এ দেশের দুঃখি মানুষের আনন্দ-বেদনার কথা। সাহিত্য শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে তাদের কল্যাণে। আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা বিস্তার হয়েছে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে তার মুখোশ খুলে ধরুন, দুর্নীতির মূলোচ্ছেদে সরকারকে সাহায্য করুন। আমি সাহিত্যিক নই, শিল্পী নই, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনোদিন কোনো মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না।” [আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭, প্রধান সম্পাদক শামসুজ্জামান খান, প্রকাশক : বাংলা একাডেমি, পৃ. ৪৪] ১৯৭৪ সালের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তি এবং ক্ষমতালোভীদের ষড়যন্ত্রে সপরিবারে নিহত হন। থেমে যায় প্রগতির চাকাÑ রুদ্ধ হয় স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ। অনেক রক্ত ক্ষয়ের পর আমরা আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করি। ২০১১ সালের ২৬ জুন শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে ‘দক্ষিণ এশিয়ার সমকালীন সাহিত্য’ বিষয়ে তিন দিনের এক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ২০১৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমি নিয়মিতভাবে আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ বাংলা একাডেমির আয়োজনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশি লেখকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জার্মানির সাহিত্যিক হান্স হার্ভার, ফরাসি লেখক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, বেলজিয়ামের সাহিত্যিক ফাদার দ্যঁতিয়েন এবং ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেনÑ ‘স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো এই বাংলা একাডেমিতেই আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যার উদ্বোধক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন যে দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন তা আজও আমাদের জন্য সমান প্রাসঙ্গিক।’ সেই থেকে প্রতিবছরই বাংলা একাডেমি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করে। এ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলোÑ ১. দেশে ও দেশের বাইরে বাংলা ভাষা প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ। ২. পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির ভাষা ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। ভাষাবিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা। ৩. বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ। ৪. বিভিন্ন ভাষা বিষয়ে অভিধান ও কোষগ্রন্থ প্রকাশ এবং হালনাগাদকরণ। ৫. বিভিন্ন দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার লেখ্যরূপ প্রবর্তন। ৬. পৃথিবীর সকল ভাষার বিবর্তন বিষয়ক গবেষণা, গবেষণা জার্নাল প্রকাশ, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন। ৭. ভাষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও রক্ষা করা। ৮. বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণমালার জন্য একটি আর্কাইভ নির্মাণ, সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা। ৯. পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার ইতিহাস, নমুনা ও তথ্যসংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা। ১০. ভাষাবিষয়ক জাদুঘর নির্মাণ, সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা। বাঙালির বাংলা, বাংলা বাঙালিরÑ এই অমোঘ সত্যকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিত রয়েছে। ক্ষমতায় থাকা না থাকার চাইতেও বড় হলো বাঙালির স্বার্থ। আজ সে কারণেই লক্ষ জনতার সামনে উদাত্ত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলতে পারেনÑ ‘আমি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি চাই বাঙালির অধিকার।’ স্বাধীন বাংলাদেশে আত্মপরিচয়কে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করায় হাজার বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ বাঙালি সংস্কৃতি এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতিকেও সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। আলোচ্য নিবন্ধে বর্ণিত কর্মকা-ের বাইরেও বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে সংস্কৃতি নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, সোনার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন গঠন, বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন গঠন, বিটিভিকে আধুনিকীকরণের প্রকল্প গ্রহণ, মঞ্চ নাটকের প্রমোদকর রহিতকরণসহ নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করণ অন্যতম। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে বড় কীর্তি হলো ‘সোনার বাংলা সাংস্কৃতিক বলয়’ নির্মাণের উদ্যোগ। শিল্পকলা একাডেমিতে আধুনিক মঞ্চ নির্মাণ, চিত্রশালার আধুনিকীকরণ, বাংলা একাডেমি আধুনিকীকরণ, চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, হাতিরঝিলকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিকমানের সাংস্কৃতিক অবকাঠামো নির্মাণসহ অসংখ্য উদ্যোগ, যা আমাদের সংস্কৃতি বিনির্মাণে অসামান্য অবদান রাখবে। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ নির্মাণ ও এর উদ্বোধন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নবধারার উন্মীলন ঘটাল। সংস্কৃতির এই জয়রথ কখনো রুদ্ধ হবে নাÑ প্রগতির সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাবে সভ্যতার নব নব আবিষ্কার আর মনুষ্য কল্যাণ সাধনে। জয় হোক বাঙালি সংস্কৃতির, জয় হোক আওয়ামী লীগের। সমাপ্ত লেখক : সংস্কৃতিকর্মী
×