ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দা রুবি রাজ্জাক

পড়ন্ত বেলার কথা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২০ জুলাই ২০১৭

পড়ন্ত বেলার কথা

জীবন বড় মধুর। এই মধুর জীবন পড়ন্ত বেলায় বড়ই নিদারুণ। ৮০ সাল পর্যন্ত বা আরও বেশি আগে বৃদ্ধাশ্রম ছিল বলে আমার ধারণা নেই। সেই কালে যত রকম দুঃখ-কষ্ট সংসার জীবনে আসুক, বৃদ্ধ বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানিকে অন্য কোথাও রেখে এসে নিজেরা আরামে বসবাস করবে এমন চিন্তা-চেতনা ছিল বলে জানা নেই। অভাব অনটন, ঝগড়াঝাঁটি মারামারি হতো, এটাই স্বাভাবিক, অনস্বীকার্য নয়, তাই বলে বাবা-মাকে দূরে ফেলে দেবে! এখন ছিল না। হয়ত কেউ বড় ভাই, বড় বোন, চাচা, মামা তাদের সঙ্গে বসবাস করত সম্মান সহকারে। অবহেলার প্রশ্নই উঠত না। ছেলেরা শহরে বা দেশের বাইরে চাকরি করে। নিয়মিত টাকা এবং চিঠি পাঠাত, ছুটি ছাটায় আসত। এটাই ধর্ম অনুসারে ভালবাসা এবং অন্তরের টানে হতো। দুঃখ-যাতনা সবাই ভাগাভাগি করে নিত। সবই অন্তরের টানে হতো। ছেলের ঘরের, মেয়ের ঘরের নাতি-নাতনি কত ভালবাসার ধন। তাদের দেখার জন্য, তাদের মুখে দাদা-দাদি, নান-নানি ডাক শোনার জন্য ব্যাকুল থাকত। তাদের জন্য কত রকম খাবার বানিয়ে রাখা হতো। বিদেশ বিভুঁইয়ে লোক মারফত শুকনো খাবার পাঠাত। এই যে মধুর আত্মিক সম্পর্ক, তা ঝর্ণাধারার মতো বয়ে যেতো। জানি জীবন এখন দ্রুত গতিতে চলছে। তাই বলে কি মানুষ অন্তরসারশূন্য হয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়ে দু’জনই চাকরি করে। নিজের ছেলেমেয়ে দেখবে, না বাবা মাকে দেখবে। তারা কি কখনো তাদের বাবা মাকে জিজ্ঞেস করেছে, আমরা যখন তোমার সংসারে বড় হয়েছি, তখন দাদা-দাদিকে কোথায় রেখেছো? একই শহরে থেকে তারা কেউ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকে। আজ বাবার চাকরি নেই। ওষুধ আনার লোক নেই। দুই বেলা খেতে বসে মুখোমুখি দুই বৃদ্ধবৃদ্ধা, পাশে বসা সন্তান নাতি-নাতনি বেটার বউ থাকে না। আদর-ভালবাসার কথা হয় না। যে বাবা-মা জন্মের পর থেকে সন্তানকে সুন্দর সৎ কর্মঠ করে নিজের পায়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম যতœ করে ছেলেকে মানুষ করে। বুকের সবখানি ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখে। (একটা গ্রাম্য প্রবাদ আছেÑ ‘একঅঙ্গ ভেজে মার গুয়ে আর মুতে, অন্য অঙ্গ কাঁপে মার মাঘ মাসের শীতে)। সেই বাবা-মাকে নিজের সুখের জন্য এত মানসিক শারীরিক কষ্টে ধুপের আগুনের মতো তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় কেমন করে। তারা কি কখনও বৃদ্ধ হবে না? বারিধারা, ঢাকা থেকে
×