ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টেকনিক্যাল ত্রুটি ॥ দ্বিতীয় মামলার ফাইনাল রিপোর্ট, প্রথমটি চলবে

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

টেকনিক্যাল ত্রুটি ॥ দ্বিতীয় মামলার ফাইনাল রিপোর্ট, প্রথমটি চলবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চাঞ্চল্যকর মাহমুদ খানম মিতু হত্যায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাশাপাশি একই ঘটনায় স্বামী বাবুলের করা মামলার তদন্তও চলবে। এদিকে, বাবুলের নিজের দায়ের করা মামলায় তার করা জামিন আবেদন ফের নাকচ হয়েছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান এ আদেশ দেন। ফলে বাবুল বাদী হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার থাকতে হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা পিবিআই সূত্র জানায়, দুটি মামলা হওয়ার পর এই নিয়ে আদালত ইতোমধ্যে বলেছেনÑ এ প্রক্রিয়ায় টেকনিক্যাল ত্রুটি রয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় পিবিআই সদর দফতরের নির্দেশনায় মঙ্গলবার সংস্থার চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পক্ষ থেকে তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মহানগর পিপি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফখরুউদ্দিন চৌধুরী জানান, সাবেক এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে করা মামলায় গত ৯ জানুয়ারি আদালত তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছিল। মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বাবুলের জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বাবুলের জামিনের বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত বাবুল আক্তারের জামিন নামঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, এর আগে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় গত বছর এবং চলতি বছরে দুই দফা আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন বাবুল আক্তার। গত সোমবার সূত্র নিশ্চিত করেছিল যে, দুয়েকদিনের মধ্যেই মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারের শ^শুরের দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন। মঙ্গলবারই সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার তদন্তে বিঘœ ঘটাতে বাবুলের অপতৎপরতায় ছিল তার নারাজি আবেদন। তবে আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় বর্তমানে মামলা দুটি। একটিতে বাবুল বাদী, অপরদিকে আসামি। তবে মিতু হত্যার ঘটনার মামলাগুলো জটিল মোড় নেয় বাবুলের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি যখন অধিকতর তদন্তের আদেশ হয়। এমনকি আদালত তখন দুটি মামলা হওয়ায় টেকনিক্যাল ত্রুটির কথাও উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ দেন। যার ফলে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই পড়ে বিপাকে। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানিয়েছেন, চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যায় দুটি মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। সাক্ষ্য প্রমাণে বাবুলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এদিকে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবদুল হালিমের আদালতে মামলার তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেয় আদালত। গতবছর ১৪ নবেম্বর মামলাটির তদন্ত পিবিআইর পরিবর্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কিংবা র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। শ^শুরের দায়ের করা মামলায় বাবুলসহ ৮ জনকে আসামি করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত মাহমুদা খানম মিতু হত্যার পর প্রথমে জঙ্গী টার্গেটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কাজ এগোচ্ছিল। কেননা, বাবুল আক্তার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু পরে অনুসন্ধানে মেলে তারই সম্পৃক্ততা। শুধু তাই নয়, তার পরিকল্পনাতেই হয়েছে এ হত্যাকা-। বাবুলের বিশ্বস্ত সোর্স মুছাকে ঘটনাস্থলে দেখেই বাবুলের সম্পৃক্ততার কথা তখন থেকেই চাউর ছিল। মুছা এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় পলাতক। তবে তাকে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। মিতু হত্যার ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়, বাবুল ঘটনার নেপথ্যে ছিল। এরপর বিভিন্ন নাটকীয়তায় পুলিশের চাকরি থেকে বাবুলের অব্যাহতি। ঢাকা গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় স্ত্রী খুনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা। এরপর বাবুলের শ্বশুর অনুকূল অবস্থান থেকে প্রতিকূল হয়ে পড়েন মেয়ের জামাইয়ের ব্যাপারে। সবমিলিয়ে একের পর এক ঘটনা পরিবর্তন হতে থাকে। এর মধ্যে গত বছর বাবুলের আরেক সোর্স ভোলাও তার জবানবন্দীতে মুছা যে কিলিং মিশনে বাবুলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশ নেয় তা স্বীকার করে। সবমিলিয়ে মামলা গতিপ্রকৃতি জট গত বছর খুললেও এ বছর কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। বাবুল কী জামিনে বের হবেন, নাকি তার নিজের করা মামলায় আরও জড়িয়ে খুনের কারণ বের হবেন, তা এখন দেখার অপেক্ষা। পুলিশের সাবেক এসপি বাবুলের স্ত্রী হত্যার মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল পিবিআই ২০২১ সালের ১২ মে। এতে আসামি করা হয় মিতুর স্বামী বাবুলকে। আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। মামলাটির তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। এরপর একইদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনও মিতু হত্যার ঘটনায় একটি মামলা করেন। যেখানে বাবুল আক্তারসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় প্রধান আসামি বাবুলকে পিবিআই রিমান্ডে নেয়। তখন বাবুল তার সোর্স মুছাকে চিনেছেন বলেও তথ্য দেন। যদিও এর আগে বাবুল ঢাকার গোয়েন্দা কার্যালয়ে তার সোর্স মুছাকে চেনেন না বলে জানিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে গত বছরের মে মাসে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। এরপরই বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
×