ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ রাস্তা নাগরিক অধিকার

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

নিরাপদ রাস্তা নাগরিক অধিকার

আবারও চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। একই দিনে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেছে এক কিশোরের। প্রথম ঘটনাটি রাজধানীর জয়কালি মন্দির মোড়ে, দ্বিতীয়টি মগবাজার এলাকায়। এমন ঘটনা ইতোপূর্বে একাধিকবার ঘটেছে। চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। দুই বাসের রেষারেষিতে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে রাস্তায়। তদন্ত কমিটি হয়েছে। জমা পড়েছে তদন্ত রিপোর্ট। মামলা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিচার হয়নি এবং বন্ধও হচ্ছে না এসব ঘটনা। দুটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় একটিও দুর্ঘটনা নয়, ইচ্ছে করে হত্যা করা হয়েছে। ডেমরা থেকে বাসে উঠেছিলেন ইরফান আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। ইরফান পুরান ঢাকার নবাবপুরের একটি ইলেকট্রিকের দোকানে কাজ করতেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশে গ্রিন বাংলা বাসে ওঠেন তিনি। ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ইরফানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় সহকারী মোজাম্মেল। রাস্তা থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান জসীমউদ্দিন নামে এক পথচারী। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ইরফানের শরীরে কিল, ঘুষির জখমের চিহ্ন ছিল। অর্থৎ ফেলে দেয়ার আগে তাকে প্রহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাটি রাজধানীর মগবাজার মোড়ে গাজীপুরগামী আজমেরী পরিবহনের ৩টি বাস প্রতিযোগিতা করে চালাচ্ছিল চালকরা। সামনের দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে কিশোর রাকিব। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় আরেক কিশোর লোকমান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। বাসে বাসে মাস্ক বিক্রি করত কিশোর রাকিব। প্রশ্ন হচ্ছে, বারবার কেন ঘটছে এমন ঘটনা? পরিবহন মালিকরা বারবার এসব ঘটনার সাফাই গাইছেন। তারা চালক-সহকারীর বদলে যাত্রী বা পথচারীদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা দেয়া হয়, সড়ক নিরাপদ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। পরিবহন মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে বিচার হয় না। শ্রমিকরা সংগঠিত থাকায় তাদের বেশিদিন আটকে রাখা যায় না। মালিক-শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট ডাকেন। ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এমন অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। ইচ্ছে করে যাত্রীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া দুর্ঘটনা নয়। দুই বাসের রেষারেষিতে মৃত্যুও দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। এগুলো সুস্পষ্ট হত্যা। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে দ্রুত বিচার করতে হবে। রেষারেষি করে চালালে সংশ্লিষ্ট বাস আটক করে বাতিল করতে হবে রুট পারমিট। বাতিল করতে হবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। নিরাপদে রাস্তায় চলা নাগরিকের দাবি নয়, অধিকার। আইনের কঠোর প্রয়োগে নাগরিকের এই অধিকার নিশ্চিত হতে পারে।
×