ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাহক সুরক্ষার কৌশল নির্ধারণে ১৫ সদস্যের আরেকটি কমিটি

দুর্নীতিবাজদের ধরতে ই-কমার্স সেল পুনর্গঠন

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৫ অক্টোবর ২০২১

দুর্নীতিবাজদের ধরতে ই-কমার্স সেল পুনর্গঠন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দ্রুত সময়ের মধ্যে ই-কমার্স খাতের দুর্নীতিবাজদের ধরতে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের কার্যক্রম আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনু বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ই-কমার্স সেল পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এছাড়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক ব্যবসার কারণে যেসব ভোক্তা প্রতারিত হয়েছেন, তাদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ১৫ সদস্যের নতুন আরেকটি কমিটি গঠিত হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে সভাপতি করে এ কমিটি করে দিয়েছে। জানা গেছে, পুনর্গঠিত ই-কমার্স সেলে সদস্য হিসেবে আছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ আলী, বাণিজ্য পরামর্শক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। আইআইটির অধিশাখার যুগ্মসচিব ই-কমার্স সেলের সদস্য সচিব করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ই-কমার্স নীতিমালা ২০১৮ প্রণয়ন করার পর এর আলোকে ই-কমার্স সেল গঠন করা হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক এই সেলটির দেখভাল করতেন। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিতর্কিত ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা ও রিংআইডিসহ অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনেক রাঘব বোয়াল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেল হচ্ছে ই-কমার্স সেল। কিন্তু দক্ষ জনবলের সঙ্কট রয়েছে। এ কারণে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন নামে গজিয়ে উঠে ই-কমার্স খাত। লাখ লাখ গ্রাহক এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গ্রাহকদের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে পাচার করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিলাসী জীবন যাপন করেছেন। সম্প্রতি ই-কমার্সে জালিয়াতি ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব ব্যর্থতার কথা বলা হচ্ছে-তার মধ্যে ই-কমার্স সেলকে সময়মতো শক্তিশালী না করার বিষয়টিও রয়েছে। এছাড়া ই-কমার্স খাতের বাণিজ্য সংগঠনের নেতারাও এর দায় এড়াতে পারেন না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে গত কয়েক মাস ধরে ই কমার্সে গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার নতুন নতুন ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, ইভ্যালি, কিউকম, আলিশামার্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলে দায়িত্ব পালন করে আসা অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে এত কম লোকবল দিয়ে কাজ করা সমস্যা হচ্ছিল। এ কারণে এখন জনবল বাড়িয়ে ই-কমার্স খাত দেখভালে আইআইটি অনু বিভাগের কাছে দায়িত্ব স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ই-কমার্স অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বিষয় হওয়ার কারণেও এটা আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনু বিভাগের দেখার বিষয়। সব মিলিয়ে সেল আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ডব্লিউটিও সেলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ই-কমার্স খাত নিয়ে কাজ করেছি। এখন কেন্দ্রীয় ডিজিটাল সেলের দায়িত্ব আইআইটিতে স্থানান্তর হওয়ায় মূল দায়িত্ব পালন করা আরও সহজ হবে। ই-কমার্স গ্রাহক সুরক্ষার কৌশল নির্ধারণে কমিটি গঠন ॥ দেশের কিছু ই-কমার্সের ভোক্তাদের সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ১৫ সদস্যের নতুন একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকি ও পরিবীক্ষণের আওতায় আনার কৌশল নির্ধারণও এ কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে সভাপতি করে এ কমিটি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশের প্রধান কার্যালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন কমিটিতে। কমিটির সদস্যসচিব থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব এবং অন্য সদস্যরাও যুগ্মসচিব পদমর্যাদার হবেন। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা, অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য, সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি এবং অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের পদ্ধতি নির্ধারণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও পরিবীক্ষণের জন্য ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণ করা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে তদারকি করা এবং এগুলোকে করের আওতায় নিয়ে আসা। কমিটির সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, কমিটির সদস্যদের নাম পাঠাতে সব দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স খাতের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল প্রতিটি ১৬ সদস্যের আরও দুটি আলাদা কমিটি করেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কারিগরি কমিটি, যার কাজ হচ্ছে ডিজিটাল কমার্স-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম, ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করা, লেনদেনজনিত ভোক্তা বা বিক্রেতা অসন্তোষ ও প্রযুক্তিগত সমস্যা নিরসন করা। অন্য কমিটি ই-কমার্স আইন ও ই-কমার্স কর্তৃপক্ষ গঠন করার বাস্তবতা বা যৌক্তিকতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে।
×