ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঢাকার দিনরাত

দুখিনী বাংলার রাজকন্যা বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্মদিন পালিত হলো গত কাল। দেশপ্রেমী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সন্তান এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে হলেও স্বাধীনতার সুফল ভোগকারী প্রতিটি নাগরিকের জন্য শেখ হাসিনার জন্মদিন একটি আনন্দ-উপলক্ষ। বাংলার অবিসংবাদিত মহানায়কের বিশাল মহীরুহসম ছায়ার নিচে ছিলেন তাঁর পরিবারের সব সদস্য। আমরা কখনই ভাবিনি যে একদিন তাঁরই কন্যার হাতে অর্পিত হবে দেশ গড়ার স্বপ্নের বাস্তবায়নের ভার। তিনি আমাদের দুখিনী বাংলার রাজকন্যা। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি সঠিকভাবেই শনাক্ত করেছে বাংলার এই প্রাণভোমরাকে। তাই একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছে তাঁর ওপর। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! তিনি নিজেও তাঁর জীবন সমর্পণ করেছেন পরম করুণাময়েরই হাতে। তাই মরণে তাঁর নেই ভয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ দেশের মানুষের সেবার ব্রত নিয়েছেন তিনি। দুখিনী বাংলার মানুষ কত দুঃখী, কত ভাগ্যবিড়ম্বিত- এটি জাতির পিতা ছাড়া আর কে এত ভালভাবে জানতেন! তাই তো স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ বোনা। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা, যাকে আমরা বলছি দুখিনী বাংলার রাজকন্যা, তিনি সর্বান্তকরণে অনুভব করেছেন এদেশের উন্নতি করা মানে গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাওয়া। হ্যাঁ, ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্পে-উৎপাদনে, বিজ্ঞানে-প্রযুক্তিতে এদেশের প্রভূত উন্নতি সাধন হয়েছে। মহাকাশে স্যাটেলাইট পর্যন্ত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সাড়ে সাত কোটি মানুষ থেকে আজ প্রায় দশ কোটি বেশি মানুষ হয়ে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে আঠারো কোটির মতো। এত মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এক অসম্ভব ব্যাপারই মনে হয়েছিল। সেটি সম্ভব করেছেন এই মানবদরদী আধুনিক প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় জীবনের প্রতিটি শাখায় উন্নতির স্পর্শ লেগেছে। কিন্তু আমার নিজের কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর মনে হয় দুঃখী মানুষের মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরণের জন্য তাঁর পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু ছাড়া দেশের গরীব মানুষের জন্য আর কোন রাষ্ট্রনায়ক ভেবেছেন? অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য- প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়াও জানে মানুষের মৌলিক মানবিক প্রয়োজন এই পাঁচটি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা হয়েছে বাংলাদেশকে। নানা প্রণোদনা কার্ড এবং তালিকার মাধ্যমে কখনও বিনামূল্যে, কখনও নামমাত্র মূল্যে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে চাল। আজ আর কেউ না খেয়ে মারা যায় না। কোটি দুঃখী মানুষের কাছে নামমাত্র মূল্যে শুধু চাল পৌঁছানো নয়, তাদের আবাসনের জন্য পরিকল্পনার বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। গাঙভাঙা ভিটেমাটিহীন ভাসমান গরিব মানুষ ঘর পেতে শুরু করেছে। মোটা কাপড় মোটা ভাতের ব্যবস্থাটুকু করার জন্য চাই আন্তরিকতা, সদিচ্ছা। দুখিনী বাংলার রাজকন্যা ছাড়া আর কোন ‘রাজাধিরাজ’ এই মহান কাজে উদ্যোগী হননি। আর শিক্ষার কথা যদি বলি, এদেশের মাটিতে জন্ম নেয়া প্রতিটি সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষার সুব্যবস্থা করেছেন তিনি। কে ধনী কে গরিব বিবেচ্য নয়। প্রত্যেকেই পাবে বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা। বছরের প্রথম দিন নতুন বইয়ের গন্ধ নিয়ে নতুন দিনের শিক্ষার্থী গেছে বিদ্যালয়ে। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কী হতে পারে। কথিত মৌলিক মানবিক প্রয়োজনের চারটিই অনেকটা পূরণের পথে হেঁটেছে বাংলাদেশ শেখ হাসিনারই কল্যাণে। বাকি রইল কেবল স্বাস্থ্য। করোনাকাল এসে খোলাসা করে দিয়েছে আমাদের স্বাস্থ্যের দুর্বলতা। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এক সুবিশাল কর্মযজ্ঞ। এ লক্ষ্য পূরণে সুদূরপ্রসারী সুপরিকল্পনা প্রণয়ন আবশ্যক। এ জন্য চাই বড় বাজেট। জনকল্যাণমুখী সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের ব্যবধান এক কঠিন বাস্তবতা। এটি স্বীকার করেই আমাদের স্বাস্থ্য খাতের গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে। মোটা দাগে বিবেচনা করতে হবে কোভিড পূর্ব ও কোভিড পরবর্তী বাস্তবতা। সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিয়েও বলা যায় শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে। গ্রাম ও শহরের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ব্যাপারে দেশে বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে, যা দূর করতে সরকার নানাবিধ ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। রাতারাতি তো নয়ই, দু-পাঁচ বছরেও জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতের আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়। কাজ শুরু“হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি এড়িয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোই আসল কথা। এর ভেতর করোনা মহামারী এসে পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। এখন জীবন বাঁচাতে করোনা মোকাবেলাই বড় হয়ে উঠেছে। অর্থবছরে গবেষণার কাজে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেও অর্থ ব্যয় করা যায়নি। তার অর্থ হলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। কোভিড মহামারী মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব গবেষণা অনেকভাবে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বারবার এ বিষয়ে তাগিদ দিচ্ছেন। বিশেষত করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বা জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে এটার প্রমাণ হয়েছে। আমাদেরও গবেষণার উদ্যোগ নেয়ার বিকল্প নেই। করোনাকালীন স্বাস্থ্য খাতে যেটুকু সাফল্য তার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিয়মিত মনিটরিং এবং প্রত্যক্ষ উদ্যোগ বড় ভূমিকা রেখেছে। সুযোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত কর্তাব্যক্তিরাই কেবল স্বাস্থ্য খাতে জনকল্যাণে অবদান রাখতে পারেন। তাই প্রয়োজন শুদ্ধি অভিযান। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের ইতবাচক পরিবর্তন আসবে শেখ হাসিনারই নেতৃত্বে। গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত দুখিনী বাংলার রাজকন্যা কী করে মনের শান্তি পাবেন? ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ [email protected]
×