অনলাইন ডেস্ক ॥ রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে বছরজুড়েই পাওয়া যায় থরে থরে সাজানো বাহারি জাতের ফুল। সকাল-সন্ধ্যা এখানে ফুল বিক্রি চলে হরদম। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে বিয়ে, জন্মদিন, ধর্মীয় উৎসবসহ ফুলের প্রয়োজন হলেই নগরবাসী ছুটে এ হাটে।
তবে করোনা মহামারী চিরচেনা চিত্রটা বদলে দিয়েছে। গত প্রায় দেড় বছর ধরে শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের জটলা চোখে পড়ে না। সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে সরকারী বিধিনিধিষ থাকায় শাহবাগের ফুলের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। এতে চোখে অন্ধকার দেখছেন সেখানকার ফুল ব্যবসায়ীরা।
এরইমধ্যে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শপিংমল-দোকানপাট খুলেছে, সামাজিক অনুষ্ঠানে বাধা কেটেছে। আর এতে শাহবাগের ফুল বাজারের দৃশ্যপটও ধীরে ধীরে পুরোনো রূপে ফিরছে। দোকানিদের ব্যস্ততা বাড়ছে মালা গাঁথা ও স্তবক সাজানোয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুল বেচাবিক্রি কিছুটা বাড়লেও আগের তুলনায় এখনও কম। বিক্রি বাড়লেও মহামারীর স্থবিরতা কাটাতে আরও সময় লাগবে। আপাতত তারা সে অপেক্ষাতেই দোকান খুলে বসে আছেন।
দেখা গছে, আজ সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকেই ব্যবসায়ীরা ফুল সাজানো ও বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে সকাল পেরুলেও অধিকাংশ ফুলই অবিক্রিত রয়ে গেছে। দোকানিরা জানিয়েছেন, এখনও ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি। সে কারণে ফুল বিক্রিতে প্রাণ ফেরেনি। এছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচিও আগের চেয়ে অনেক কম। বিয়ে-জন্মদিন-গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানও হচ্ছে সীমিতভাবে। এসব কারণে ফুলের চাহিদা অনেক কমে গেছে।
ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, এখন ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে সপ্তাহের অন্তত পাঁচদিন তাদের বসেই কাটাতে হয়। বেচাবিক্রি খুবই কম। বৃহস্পতি ও শুক্রবার মোটামুটি ভালো চলে ব্যবসা হয়। এ দুদিন চাহিদা থাকে ফুলের। কিন্তু সপ্তাহের মাঝামাঝি বৃষ্টি হলে গ্রাম থেকে ফুলের আমদানিও কমে যায়। তখন চাহিদা মতো যোগান দেয়া সম্ভব হয় না। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদি উন্মুক্ত হলে ফুল ব্যবসায় আবারও সুদিন ফিরবে।
শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনার আগে আমার দোকানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতো। এখন সারা দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকাই বিক্রি হয় না। তাছাড়া ফুল পচনশীল পণ্য হওয়ায় সময় মতো বিক্রি না করতে পারলে লোকসান গুনতে হয়। মহামারীকালে অনেক দোকানি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এখন ফুলের দামও কম, প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। অনুষ্ঠানাদি না থাকায় এমনটা হয়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী জানান, এখনও আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারিনি। সব ধরনের অনুষ্ঠান উন্মুক্ত না হওয়ায় ফুল ব্যবসায় প্রাণ ফেরেনি। অনুষ্ঠানাদি উন্মুক্ত হলে ব্যবসাও জমে উঠবে। তখন হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশে ফুলের উৎপাদন এবং সরবরাহ ঠিক রাখতে এ খাতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া জরুরি।