ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাতে ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যাবে হাজার হাজার জেলে

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ২৩ জুলাই ২০২১

রাতে ইলিশ শিকারে সমুদ্রে যাবে হাজার হাজার জেলে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাথরঘাটা ॥ কাঙ্খিত ইলিশ আহরনের আশায় আজ রাত ১২টার পরেই হাজার হাজার জেলে সাগরে রওয়না হবে। আগামীকাল থেকে সাগরের দেখা মিলবে হাজার হাজার ট্রলার ও জেলেদের। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসবে তাজা ইলিশ কিনতে। বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সারিবদ্ধ শ্রমিক,জেলে,ভ্যান শ্রমিক, থাকবে মাছবাহী ট্রাক। আবারও ইলিশ ক্রেতাও বিক্রেদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরন কেন্দ্র। ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রাণফিরবে। মৎস্য অবতরণ এলাকার ঘাটগুলো আবার সরব হয়ে উঠেছে। যেখানে নিষেধাজ্ঞার সময় শূন্যতা বিরাজ করছিল সেখানে এখন আবার প্রান সঞ্চার হয়েছে। তবে এই উৎসবের মধ্যে রয়েছে করোনা আতঙ্ক। ২৩ জুলাই থেকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার ‘লডকাউন’, এ মতাবস্থায় সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যেও হতাশার ছাপ থাকবে বলে জানান মৎস্য ব্যাবসার সাথে জরিত সকলে। সাগরে সব ধরনের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিপাওয়ায় মৎস্য শিকারের উপর টানা নির্ধারিত ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার (২৪ জুলাই) থেকে সাগরে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটার জেলেরা। শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাত ১২টার পর থেকেই মাছ ধরা ট্রলার নিয়ে সাগরের দিকে ছুটবেন জেলেরা। গভীর সাগরে ইলিশ পাওয়ার আশায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দলবেধে বেরিয়ে পড়ছে জেলেরা। তাদের প্রত্যাশা নিষেধাজ্ঞার ফলে আগের চেয়ে ইলিশ বেশি ধরা পড়বে সাগরে। এর আগে, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। বঙ্গোপসাগর মুখী একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,করোনার কারনে ও ৬৫ দিনের সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বেকার বসে থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে সমুদ্র উপকূলীয় জেলেদের। আজ প্রস্তুতির শেষ দিনে শুক্রবার জেলেরা নতুন করে বিনিয়োগ করে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলেরা জানিয়েছেন, করোনা প্রকোপের কারনে ধারদেনা শেষে সমুদ্রে জাবার পূর্বে প্রতিবেশীদের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সমুদ্রে নামছেন তারা। মৎস্য বিভাগ বলছে, এই ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞায় বঙ্গোপসাগর ও তার মোহনায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় জেলেরাও মাছ ধরা থেকে বিরত ছিল। আর কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই মিলবে কাঙ্খিত রূপালি ইলিশ। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জেলেদের ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। ৬৫ দিন পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও আবারও নিজ পেশায় ফিরতে পেরে খুবখুশি জেলেরা। এ দিকে আড়ৎদারগন তাদের আড়ৎ নতুন করে সাজিয়ে নিচ্ছেন। নতুন করে আবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন ইলিশ বিক্রির জন্য। জয়নাল মাঝি, সহিদ মাঝি ও শাহিন মাঝি জানান, ৬৫ দিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার পর শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছেন তারা। ইলিশ মাছ ধরা একমাত্র পেশা হওয়ায় এতোদিন অলস সময় পার করতে হয়েছে তাদের। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় ধার-দেনা করে সংসার চালিয়েছেন তারা। এখন সমুদ্রে ইলিশ ধরা পড়লে সামনের দিনগুলো ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারবে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে পারবেন বলে আশা করছেন তাঁরা। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, অলস সময় কাটিয়ে জেলেদের অনেক আশা নিয়ে সাগরে পাঠানো শুরু করেছি। আশা করছি ভালো মাছ পাবেন জেলেরা। আবারও জেলেদের মুখে হাসি ফুটবে। জেলেসহ আমাদের ধারদেনাও শোধ করতে পারবো। পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্তু কুমার অপু জানান, সাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন সরকার। আজ থেকে ইলিশসহ অন্য সব ধরনের মাছ শিকারে আর কোনো বাধা নেই। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। তার মধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২শ ৭৭ জেলে। সকলকেই ৬৫ দিনের খাদ্য সহায়তা ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা কেবলমাত্র চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোর্ডের জন্য বলবৎ ছিল। পর বছর থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। এতে চরম বিপাকে পড়েন এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দাদনদার, বরফকলের সঙ্গে সম্পৃক্তসহ জাল প্রস্তুতকারী, তেল সরবরাহকারি, খাবার সরবরাহকারি লাখ লাখ পরিবার।
×