ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুনা তাসমিনা

স্বামী-স্ত্রী, সম্পর্কের বোঝাপড়া

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ৭ জুন ২০২১

স্বামী-স্ত্রী, সম্পর্কের বোঝাপড়া

স্বামী-স্ত্রী। দুটো মানুষের মনের বন্ধন। শর্তহীন একটি সম্পর্কের নাম। তবুও প্রত্যেক সম্পর্কেই দৃশ্য অথবা অদৃশ্য একটি বোঝা পড়া তো থাকেই। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনেও তেমনি আছে কিছু অদৃশ্য লেনদেন। একটি মেয়ে যখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামীর ঘরে যায়, তখন ওই ঘরে তার সবচেয়ে প্রিয়জন, কাছেরজন তার স্বামী। হতে পারে স্ত্রীটি শুধুমাত্র গৃহিণী, কিংবা কর্মজীবী। এই ক্ষেত্রে তাকে স্বাধীনতা দেয়া স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা বহুগুণ বেড়ে যায়। যৌথ পরিবার এখন ভেঙে গেলেও বিয়ের একেবারে শুরুর দিকে দুজন নরনারী বৈবাহিক জীবন সূচনা করে একটি সংসারে। আমার মনে হয়-বউটি যখন পরিবারের সব কাজ ঠিকটাক মতো করে ক্লান্ত হয়ে স্বামীর কাছে আসে, তখন স্বামী যদি শুধু এটুকু বলে, ‘আজ সারাদিন অনেক কষ্ট করলে। ‘আমি নিশ্চিত নিমেষেই সারা দিনের পরিশ্রমের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে স্ত্রীর। আবার অফিসের ফাইলের বোঝার কাজ শেষ করে স্বামীটি যখন ঘরে ফিরে, স্ত্রী যদি তার শার্টের বোতামগুলো খুলতে খুলতে বলে, ‘ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি চা করে আনছি। গরম চা খেয়ে বিশ্রাম নাও। ‘কথাগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি ভালবাসার আদান প্রদান এখানে স্পষ্ট। এই যে একজন একজনকে বুঝতে পারা এটাই তো প্রকৃত দাম্পত্য জীবন। এখানেই সুখ পাখিরা বাসা বাঁধে ভালবাসায়। ভালবাসা যেখানে, সেখানে অভিমান থাকবে, অভিযোগ থাকবে। এসব অভিমান,অভিযোগ মনের মধ্যে পুষে না রেখে দুজন বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মিটমাট করে ফেলাও সংসারে শান্তির একটি আশ্রয়। স্বামী-স্ত্রীকে কী দিতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, একজন পুরুষ যখন কোন মেয়ের স্বামী হন, তখন তার দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। তার স্ত্রী হয়ে যে মেয়েটি তাদের পরিবারে এলো, তাকে সহযোগিতা করা পরিবারের সদস্যদের বুঝতে। বিয়ে প্রেমের হোক কিংবা পরিবারের পছন্দে, নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে স্বামীর সহযোগিতা অপরিহার্য প্রত্যেক মেয়ের জন্য। বধূবেশে আসা মেয়েটির কোল আলো করে আসে তাদের দাম্পত্যজীবনের স্বীকৃতি, তাদের সন্তান। যোগ হয় নতুন দায়িত্ব। সন্তানের দেখাশোনা। স্বামীর সহযোগিতা, সহমর্মিতা পেলে সংসার, সন্তান, কর্মক্ষেত্র সবজায়গাতেই সাবলীলভাবে কাজ করতে পারবে সে। কর্মজীবী স্ত্রীর ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়। দাম্পত্য জীবনে দানা বাঁধে সন্দেহ। এই সন্দেহকে প্রশ্রয় যতই দেবে, ততই বাড়বে দুজনের মধ্যে তিক্ততা। একইভাবে স্ত্রীকেও রাখতে হবে স্বামীর ওপর বিশ্বাস। সম্পর্কে একবার অবিশ্বাস দানা বাঁধলে সেই সম্পর্কের মাঝখানে সারা জীবনের জন্য একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। অনেকেই সমাজের ভয়ে সেই সম্পর্ককে ধরে রেখে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকেন জীবনের পথে। অনেকেই বেছে নেন ভয়াবহ সেই সিদ্ধান্ত ‘বিচ্ছেদ। ‘কেউ শুরুতে, মাঝখানে, কেউবা অনেক শেষে। শুরুর দিকের বিচ্ছিন্নতা কারও জীবনে তেমন প্রভাব ফেলে না, যদি সন্তান না থাকে। কিন্তু দুজনের মাঝখানে সেতু হিসেবে কাজ করা সন্তান যদি থাকে, তবে দুটি নয়, কয়েকটি জীবনকে ঠেলে দেয় এক অনিশ্চয়তার দিকে। পারিবারিক জীবনের প্রত্যেকদিনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চলে এক অদৃশ্য মতভেদ। পরিবারের পুরুষটি পরিশ্রম করে উপার্জন করছে সংসারের সুখের জন্য, স্বাচ্ছন্দ্যে স্ত্রী সন্তানকে চালানোর জন্য, তাদের আবদার পূরণের জন্য। স্ত্রী-ও তেমনি ভোর থেকে রাত পর্যন্ত খাটছে একই উদ্দেশ্যে। তবুও কেন অনেক সময় তৃতীয় একটি হাত এই দুজনের বন্ধনের মাঝে ঢুকে পড়ে বোঝা মুশকিল। আর এই তৃতীয় নয়নে যখন একজন আরেকজকে দেখে, তখন হিসেবে আসে পরিবর্তন। তীব্র। হয়ে যায় মন কষাকষি। বর্তমানে ভাঙনের চিত্র আমাদের এই বার্তাই দেয়-স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এখন বড় হিসাবি। লেনদেনে নেই একটুও ছাড়। কাবিনের টাকা, বিয়ের অলঙ্কার, বিয়ের খরচ কোনটাই বাদ পড়ে না এই হিসাব থেকে। বাবা-মায়ের এই বিচ্ছিন্নতার প্রভাব পড়ে খুব বেশি করে সন্তানের ওপর। তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেশিরভাগ সময় বিপথগামী হয়ে যায়। প্রত্যেক বাবা-মা চায় তাদের সন্তান মানুষ হোক। তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে হলে দুজনের সম্পর্কে এমন কাউকে কোনভাবেই আনা উচিত নয়, যাতে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হবে। একটি সুন্দর সংসার, সুন্দর একটি পরিবারের উদাহরণ। একটি সুন্দর পরিবার, সুন্দর একটি সমাজের উপহার। একটি সুন্দর সমাজ, সুন্দর একটি দেশের উদাহরণ। প্রত্যেক পরিবার হোক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভালবাসার আদান প্রদান।
×